চেতনাগত বিষয় নিয়ে বার বার লেখার ইচ্ছে হয়। কিন্তু তা লিখা হয়ে ওঠেনা। আমি যেহেতু সাংবাদিকতার মতো মহান পেশায় জড়িত সেহেতু আমাকে ভাবতে হয় সাংবাদিকতার বিষয়ে চেতনার নানা প্রশ্ন নিয়ে। একজন মানবতাবাদী প্রকাশ করেন, "সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই।" এমন বাক্য প্রকাশকে আদর্শিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলে থাকে। এটা আবার মানবতার চেতনা নামেও অভিহিত হয়। এনিয়ে আমরা মানবতাবাদী একজন ধার্মিক মানুষের চেতনা হয় স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে। হোক সে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা মুসলিম। কেউ স্রষ্টার আদেশ পালন করলে আমরা তাকে ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ বলে থাকি। এরূপ চেতনা নিয়ে ধর্মতত্ত্বের লিখন লিখি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে আমরা আরেকটি চেতনার কথা আমরা বলে থাকি। স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা সোচ্চার থাকি। কেহবা মুক্ত চিন্তার অধিকারী হয়ে স্বাধীন ভাবনায় পথ চলি। এটাকে বলে মুক্তবুদ্ধির চিন্তা ও চেতনা। মনে যা চায় তাই নিয়ে লেখালেখি করলে তাকে বলি মুক্তবুদ্ধির লেখক।
এতসব চেতনা আর এতসব লাইনে লেখালেখির বিভাজন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত রয়েছে সাংবাদিকরা। বাংলাদেশে যত প্রতিষ্ঠান রয়েছে সব প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে এসব নানা বিভাজিত চেতনার লোক। রয়েছে বিভাজিত লেখককুলও।
একটি জাতির ঐক্যের জন্য অনেকেই চিন্তা করে থাকেন। কিন্তু ঐক্য গড়ায় যখন চেতনার প্রশ্ন জড়িত হয় তখন দেখা দেয় বিভিন্ন পথ ও মতের দ্বন্দ্ব। তখন জাতি আরো বেশি বিভাজিত হয়।
ধরুন একজন মানবতাবাদী চেতনার লোক সমাজে কাজ করছে। তাকে ঐক্যের কথা বলা হলে তার চোখে ভাসবে সেবা, দয়া আর দাক্ষ্যিণ্যতা। সে বলবে চোরও মানুষ,ডাকাতও মানুষ। রাজাকারও মানুষ, মুক্তিযোদ্ধারাও মানুষ, খুনিরাও মানুষ। তাই সবার উপরে মানুষ সত্য বলে মানবতার উদার বাণীতে উদ্ভাবুদ্ধ হয়ে ভালোমন্দ নির্বিশেষে সকলের সেবা করে যেতে পারলেই জাতি ঐক্যবদ্ধ হবে। এ নিয়ে সাংবাদিকরা লেখালেখি করলে মানবতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে জাতি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। যদি একজন ধার্মিককে প্রশ্ন করা হয় যে, জাতি কীভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে? তবে উত্তরে সে বলবে যে, এর একমাত্র পথ হলো ধর্মীয় চেতনসর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যাবে। কিন্তু ধর্মে ধর্মে য বিশ্বাসগত কারণে যে সংঘাত রয়েছে সেটা তারা বলবেনা। একধর্মের কাছে অপর ধর্মটা অধর্ম সেটা নির্দ্বিধায় বলে দিবে। আর এতে ধর্মীয় লেখক ও সাংবাদিকরা তার সহায়ক ভুমিকা পালন করলে দেশটা পরিণত হবে সোনার রাজ্যে। একজন মুক্তবুদ্ধির মানুষকে জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে জানতে হলে তার উত্তরে সে বলবে যে, সবাইকে স্বাধীনভাবে চলতে দিন,বলতে দিন, যা পারে করতে দিন, যা লিখতে চায় তা লিখতে দিন, যা ভাবতে চায় তা ভাবতে দিন। এমন স্বাধীনতা দিলে সবার মাঝে তৈরি হবে স্বাধীনচেতা এক অনুভুতি। যে যেভাবে পারে সেইভাবে চলতে পারলে ও তাতে কোনো বাধা না দিলে দেশে স্বাধীনতার প্রকৃত ফসল অর্জিত হবে। আর জাতিতে তৈরি হবে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যতা। জাতির জাতির ঐক্য বিষয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিবেন যে,
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উদ্বুদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। আর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পরাভুত করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কেননা যারা ১৯৭১ সসলে পরাভুত হয়েছিল তারা এখনও তার প্রতিশোধ নিতে সুযোগের সন্ধান করছে। তারা সুযোগ পেলেই ছুবল দেবে। দেশকে অকার্যকর রাস্ট্রে পরিণত করতে নানা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করবে। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া ছাড়া জাতীয় ঐক্যের আর কোনো বিকল্প নেই। স্বাধীনতায় বিশ্বাসী লোকজন মনে করে দেশে এখনও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সক্রিয় রয়েছে। এ চক্র এখন আছে লেখালেখিতে,সাংবাদিকতায়, আইনপেশায়,বিচারালয়ে,সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠেে,নানা প্রযুক্তির কলা-কুশলী হিসেবে সর্বস্থানে ঢুকে পড়েছে।
আমি যতসব চেতনার কথা বললাম তার একটি মূল ইস্যু বের করতে পারে সাংবাদিকরা। কারো যুক্তি যেমন ফেলে দেবার নয়, আবার সবার যুক্তি এককভাবে গ্রহণীয়ও নয়। সেটা বিবেচনা করে আমাদের এগুতে হবে। সেজন্য একদল সাংবাদিক এমনভাবে তৈরি হওয়া উচিত যারা আধুনিক বিশ্বের সাথে উন্নয়নের পথে এগুতে তার তথ্য প্রকাশ করবে। যারা ত্রিশলক্ষ শহীদের কথা মনে রেখে সামনের দিকে এগুবে।
সেইসব বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে বর্তমান আওয়ামীলীগের ক্ষমতাসীন সরকার জাতি গঠনে সেই সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করছে।
এ দলের মাঝে আছে মুক্তচিন্তার বিষয়াদি, ধর্মীয় লাইনেও সম্রীতির এক নজীরবিহীন সহঅবস্থানের রূপায়ণ,মানবতার প্রশ্নে সবার ওপরে মানুষ সত্য বলে বাংলাদেশে লাখো লাখো বণিআদমকে জায়গা করে দিয়ে বিশ্বমানবতাবাদী মা বলে আখ্যায়িত হয়েছে। এ সরকারের আমলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বেশি প্রতিফলন ঘটেছে। মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানীপাওয়াসহ অনেককিছুই অর্জন করেছে এসরকারের আমলে। তাই জাতীয় ঐক্যের জন্য বর্তমান সরকার ও দলীয় চেতনায় যারা আছে তার ঐক্যের বড় অর্জনের পরাকাষ্ঠা দেখাচ্ছে।
আর বর্তমান সরকার হলো সাংবাদিক বান্ধব সরকার। ফলে এই প্রথম প্রতিটি জেলার সাংবাদিকরা তাদের প্রয়োজনে সম্মানীসহ প্রকৃত মর্যাদা পাচ্ছে। তাই দেখা যাচ্ছে যে বিভাজিত চেতনাকে একটি ঐক্যের প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। (চলবে)