রেজাউল হাবিব রেজাঃ🔴আমি যখন থেকে বুঝি তখন থেকেই স্বল্পসংখ্যক গবেষক ছাড়া বেশিরভাগ লোককে পেয়েছি তথ্য সংগ্রাহক হিসেবে। এমনকী পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন যেসব তথ্যের ভিত্তিতে সেইসব বই পড়লে মনে হয় এগুলো বিশাল এক তথ্যের ভান্ডার। এসব তথ্য সংগ্রহে নিঃসন্দেহে পরিশ্রম করেছে। এরকম তথ্য সংগ্রহের জন্য তাদেরকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। কিন্তু এগুলো মোটেও গবেষণার বই নয়। ইতিহাস জানতে তথ্যসূত্রের বই।
কিন্তু নিচের লেখা তথ্য অনুযায়ী কাউকে গবেষক হিসেবে পাইনি। তথ্য সংগ্রহ করাকে যদি গবেষণা বলা হয় তাহলে কোনো সমস্যার সমাধানকল্পে গ্রহণীয় ও প্রতিষ্ঠিত সুরাহাকারীকে কী বলা হবে?
তথ্যের ভান্ডার গড়ে তুললেই কী তিনি গবেষক? যেখানে তথ্যসূত্র ছাড়া কোনো প্রয়োজনীয় ও দ্বন্দ্বমূলক বিষয়ের কোনো সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়না সেইসব বইকে কীভাবে গবেষণার বই বলে?
একজন লেখক সারা জীবন যদি হাজার হাজার বই পড়ে সকল বই থেকে তথ্যগুলো নকল করে এক সাথে জমা করে একটি পান্ডুলিপি তৈরি করে সেটাকে কী করে আমরা গবেষনার বই বলে থাকি? তিনি হয়তো ইতিহাস লেখক হতে পারেন। কিন্তু ইতিহাসের গবেষক হিসেবে সম্বোধন করতে পারিনা।
এখন বুঝতে হবে তথ্যগত সমস্যা কী এবং এর সমাধান কী? যেমন আপনি চন্দ্রাবতীকে নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। এক জায়গায় পেলেন চন্দ্রাবতীর প্রেমিক জয়া প্রেমের সাড়া না পেয়ে ফুলেস্বরী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এমতা অবস্থায় চন্দ্রাবতী জল আনতে নদীর ঘাটে গেলে নদীতে জয়ার ভাসমান দেহ দেখতে পান। জয়ার ভাসমান লাশ দেখে চন্দ্রাবতী নিজেও ওই নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন!
🔴এখন এ ঘটনার কিছু প্রশ্ন আছে। তার সমাধান এ স্টোরি লেখককেই দিতে হবে।
👉প্রশ্নঃ যে ঘটনাটি জানলাম তা সত্য নাকি মিথ্যা? যদি সত্য হয় তাহলে এ তথ্যের সূত্র কী? যদি মিথ্যা হয় তাহলে কেন মিথ্যা তার সূত্র কী? মনে করুন আপনি ইতিহাস ঘেটে তার সঠিক জবাব দিলেন। তাহলে এ সঠিক জবাব দেওয়াকে আপনি গবেষণা বলবেন? মোটেই না। কারণ আপনি আরেকটি বই থেকে তথ্য নিয়ে সত্য বা মিথ্যা লিখে দিলেন। এ পরিশ্রমের জন্য আপনাকে আমরা বলবো আপনি একজন পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল পড়ুয়া। এ জন্য আপনাকে প্রশংসা করা যায় কিন্তু গবেষক বলা যায়না। কারণ আপনি এতে বইয়ের বাইরে গবেষনা করে আপনি নিজে নতুন কোনো তথ্য সংযোজন করেননি যা সকলের গ্রহণযোগ্য হয়। যে তথ্যের সমস্যা প্রকট। বইয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সূত্রের লেশ ধরে প্রথমে অনুমান, তারপর নিজ মনের তীক্ষ্ণ ও সুক্ষ বুদ্ধি খাটিয়ে এমনভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন যে বেশিরভাগ পাঠক বলতে বাধ্য হয় যে হ্যাঁ ঘটনাটি এরকমই হতে পারে ও তা যদি বেশিরভাগ পন্ডিতের মতে স্বীকৃতিসহ প্রতিষ্ঠা পায়, তাহলেই এটা গবেষণা হতে পারে। তাছাড়া সবাই ইতিহাসের সূত্র সংগ্রাহক ছাড়া কিছুই না!
অর্থাৎ যেখানে সমস্যা, সেখানে বইয়ের বাইরে থেকে যৌক্তিক সমাধানই গবেষণার অংশ।"
মানুষ আদিকাল বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। কোন কালে কী উপাদান দিয়ে তা নির্মিত তা অধ্যয়ন করে বুঝার ক্ষমতা তৈরি হতে পারে পাঠকের। এটা পুরণো বই ঘেটে যদি পান তাহলে সেটা আপনার তথ্যসূত্র হতে পারে। আপনি এজন্য এর তথ্য সংগ্রাহক হতে পারেন। কিন্তু গবেষক হতে পারেননা।
গবেষক তো তখন হবেন, যখন দেখবেন আপনি এমন এক নির্মিত স্থাপনা পেয়েছেন যে এ স্থাপনাগুলোর ধরণগুলো কোনো বইয়ের সাথে মিলেনা। যখন দেখলেন সৃষ্টির আদিবাস থেকে এমন পদ্ধতির স্থাপনার কথা কোনো তথ্যবিদ বলতে পারছেনা। এ স্থাপনার উপকরণগুলো কোনোক্রমেই কোনো স্থাপনার সাথে মিলছেনা। বিষয়টি মনে হচ্ছে একেবারে নতুন। আপনি বা পন্ডিতরা মিলে যখন কোনো তথ্যসূত্র না পায় তখন আপনি আপনার মেধায় সকলের গ্রহণযোগ্য সমাধান দিলেই কেবল আপনি গবেষকের মর্যাদা পেতে পারেন। নচেৎ আপনি একজন তথ্যসংগ্রাহকই বটে।
মিশরের পিরামিডের বহু গবেষণা হয়েছে। কী উপাদানের কারণে মানুষের দেহের মমিগুলো অক্ষত তার আজো প্রকৃত রহস্য বের করা যাচ্ছেনা।
আমি এসকল গবেষকনামধারী ভাইদেরকে বলবো যে আপনারা মিশরের সেইসব মানব দেহের মমি করার উপাদন গুলো খুঁজে বের করুন এবং গবেষণার মর্যাদা লাভ করুন। নচেৎ নিজেদেরকে একজন তথ্যসংগ্রাহক হিসেবে গ্রহযোগ্য পরিমন্ডলে নিজেকে আবদ্ধ রাখুন। সাদা-কালোর পার্থক্য বুঝে থাকলে কে তথ্যসংগ্রাহক আর কে গবেষক তার পার্থক্যও আপনি বা আপনারা বুঝেছেন বলে মনে করি।