রেজাউল হাবিব রেজাঃ

রূপকথাকেও হার মানিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়তে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ। একটি মসজিদের দান বাক্স খুলে পাওয়া যায় কোটি কোটি টাকা। এটি এক অবিশ্বাস্য হলেও শতভাগ সত্য একটি নিয়মিত ঘটনা। দিন দিন বেড়ে চলা এক বাস্তব হিসেবের আশ্চর্য চিত্র। এটি কিশোরগঞ্জের এক বাস্তব বিষয় !! সেটি হলো সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করা পাগলা মসজিদের দানবক্সের কথা !!

কিশোরগঞ্জের‌ ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান বাক্স থেকে‌ এবার মিললো ৫_কোটি_৫৯লাখ_৭হাজার_৬শত ৮৯টাকা‌‌ সহ বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা।

আজ শনিবার (০৬মে) সকাল ৮টায় মসজিদের আটটি দানবাক্স খুলে ১৯টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদে দোতলায় এনে গণনা করা হয়। টাকা গণনার কাজে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক, মসজিদ কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিলেন। প্রতি তিন মাস পর পর এই দান বাক্স গুলো খোলা হলেও এবার রমজান মাস থাকায় খোলা হলো চার মাস পর।‌

এর আগে গত ৭ জানুয়ারি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। ২০টি বস্তায় তখন রেকর্ড ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল। মানতকারীদের বিশ্বাস, এই মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ মসজিদে দান করে থাকেন। মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে। শুধু তাই নয়, কয়েক ক্যাটাগরিতে রোগী ও সাধারণ বিবেচনায় হতদরিদ্র মানুষ মসজিদের অনুদান পেয়ে থাকে।

আসা যাক ভিন্ন আলোচনায়। মসজিদের গননায় জেলা প্রশাসক মহদয়ের কাছে কিছু প্রস্তাবনা ছিলো অতীতে। তা রক্ষা না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ জমা হয়েছে। সেটি হলো পাগলা মসজিদ নিয়ে পাগলাবাবা নামের এক কল্প কাহিনী তৈরি করা হয়েছে। ওই পাগলা বাবা অনেক কারামত সম্পন্ন। মানুষের নানা সমস্যার সমাধান করতে পারে। একটি ইউটিউব চ্যানেলে এমন ধারণা দিয়ে কতিপয় ভন্ড ব্যক্তি পাগলা মসজিদে দান করতে আসা সহজ সরল ব্যক্তিদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে অবগত হওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসক মহোদয় কোনো প্রকার কার্যকরি পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। তাতে ভন্ডদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতারিত হচ্ছে শত শত মানুষ।

দ্বিতীয়তঃ প্রস্তাব ছিলো সাংবাদিকদের রিপোর্টিং এ একটি নিয়ম চালু করা। সেটি হলো পাগলা মসজিদের সিন্দুক খোলার সময় সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকবে যা ৮/১০মিনিটের বিষয়। আর গননার সময় ভিডিও ফুটেজ বা ছবি তোলা যা ৫মিনিটের বিষয়। সবশেষে জেলা প্রশাসক মসজিদের টাকা গননা শেষে মোট হিসেবের ব্রিফিং দেবেন। জেলা প্রশাসক মসজিদ কমিটির সভাপতি হলেও কোনে জেলা প্রশাসক তা করেননি। ফলে সাংবাদিকদের একাংশ তাদের খাবারের দাওয়াত না দিলেও মসজিদ কর্মচারী ও গননাকারীদের সাথে বসে যেতে দেখা গেছে।  যার কারণে মসজিদ কর্তৃপক্ষ  বিড়ম্বনায় পড়ে থাকে। এতে সুশীল সাংবাদিকরাও লজ্জিত হয়। যদিও কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে দিন দিন টাকা বৃদ্ধিতে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের খবর থাকে, তথাপি অজানা বহু অনিয়ম আনন্দ ও মর্যাদাকে ম্লান করে দেয়। সুশীল সমাজ চায় পাগলা মসজিদ পরিচালিত হোক দ্বীনদার ত্যাগী একদল মানুষ দ্বারা। তা না হলে বিকৃত রুচির লোকজন একদিন পাগলা মসজিদকে গ্রাস করে ফেলবে।