কিশোরগঞ্জের মৌলভী আশরাফুদ্দীন আহমদ মাস্টার এক আলোকবর্তিকার নাম। সরকার কর্তৃক সদ্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে তাঁকে একুশে পদকে ভুষিত করার। কথা রয়েছে আজ ২০ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার প্রয়াত আশরাফুদ্দীনের পক্ষে তার সুযোগ্য সন্তান অধ্যক্ষ শরীফ সাদীর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পদকটি তুলে দেয়ার।
কেউ পদক পায় তদবির করে। আবার কেউ পদক পায় জাতির পক্ষে অবদান রাখায়। আশরাফুদ্দীন মাস্টার এমন এক ব্যক্তিত্ব যে তার আন্দোলন স্পর্শ করেছিল পাকিস্তান সরকারের নেতৃবৃন্দের। এ জন্য তিনি কখনও মনোনয়ন পাননি পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের। বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় তিনি নিজেকে সোপর্দ করেছিলেন ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমায়। আপোষ করেননি পাকিদের সাথে। তাই তিনি শিক্ষকতার ক্ষেত্রেও হোচট খেয়েছিলেন। রামানন্দ হাইস্কুল থেকে ছুটতে হয়েছে আজিম উচ্চবিদ্যালয়ে। ভাষা সংগ্রামে সোচ্চার ভুমিকা পালন করায় জেলে যেতে হয়েছে। নানা কৃতিত্বের ফসল অর্জনে বাঁধাগ্রস্থ করেছে পদে পদে। রাজনৈতিক অঙ্গনে সোনারবাংলা গড়ার অভিপ্রায়ে নিজেকে নির্ভয়ে উপস্থাপন করেছে জনতার হয়ে। যে আওয়ামীলীগ আজ এত শক্তিশালী তার পেছনের যতজন ত্যাগী ব্যক্তিত্ব ছিলেন তম্মধ্যে ভাষাসৈনিক আশরাফুদ্দীন ছিলেন অন্যতম।
স্বাধীনতার সেই ৫৩বছরের পদার্পণ মূহুর্তে এসে তাঁকে একুশে পদকে ভুষিত করার প্রয়োজন ছিল অনেক আগেই।
আসি ভিন্নান কথায়। নানা অবদানে কৃতিমানরা জাতীয় পদক পাবেন সেটা অনস্বীকার্য। তবে সবধরণের কৃতিত্বকে সমান্তরাল করে সকল জাতীয় ব্যক্তিত্বকে এক কাতারে শামিল করবেন এবং একই পদকে ভুষিত করবেন সেটা আমি আমার ব্যক্তিগত মতামতে বেমানান বলে মনে করি। এবার একজন দই বিক্রেতাকেও একুশে পদকে ভুষিত করা হয়েছে। তিনি এক প্রতিকুল অবস্থায় হাজার হাজার বইয়ের সমাহারে একটি লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন। তাই তিনি নন্দিত হবার যোগ্য। সরকার তাকে একুশে পদকে ভুষিত করায় জাতি আনন্দিত। কিন্তু ভাষার সংগ্রামে নিবেদিত মানুষগুলোর সাথে একই দিনে একুশে পদক গ্রহণ করাটা আমি সমীচীন মনে করছিনা। ক্যাটাগরিতে যা-ই উল্লেখ থাকুক, আমি মনে করি পুরো ভাষার মাসটাতেই পদক দেয়া যেতে পারে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। যাদেরকে শুধু ভাষা আন্দোলনের অবদানের জন্য দেয়া হবে তাদেরকে জীবিত বা মরণোত্তর পুরস্কৃত করা হোক একুশের দিনে। আর যারা প্রতিকুল অবস্থায় সাধারণ মানুষ হয়েও অসাধারণ কাজ করেছেন তাদেরকে আলাদা কোনো দিনে পুরস্কার বা পদক প্রদান অতি যুক্তি যুক্ত বলে মনে করি। তাতে তারা স্বমহিমায় আলোকজ্জ্বল কাজের বিষয়টির ব্যাপক পরিচিতি পাবে এবং জাতির কাছে সুস্পষ্ট ধারণার মেসেজ যাবে। উজ্জীবিত হবে দই বিক্রেতা জিয়াউল হকের মতো অন্য পেশার কৃতি লোকজনও। কিন্তু একই সাথে একই দিনে এক ধরণের পদকে ভুষিত করায় এক মিশ্র অনুভুতি তৈরি হবে। সবাই কৃতিমান। কিন্তু জাতিকে পৃথক ধারণা দিতেই ভাষার মাসেই কয়েক ধাপে এ পদক প্রদান অনুষ্ঠান করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা কিশোরগঞ্জবাসী আনন্দিত হয়েছি যে আমাদের অঞ্চলের একজন ভাষা সংগ্রামীকে একুশে পদক দেয়া হয়েছো। কিন্তু এ পদক পাওয়ায় প্রশংসার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন ওই কৃতিমান দই বিক্রেতা। কিশোরগঞ্জের সন্তান হয়েও আশরাফুদ্দীন মাস্টার দই বিক্রেতার মতো প্রশংসায় ভাসতে পারেননি। ফেইসবুকে যদি প্রশংসার পরিসংখ্যান চালান তবে ওই কৃতিমান দই বিক্রেতার প্রশংসা বেশি দেখবেন। এজন্য একুশে পদক প্রাপ্তির তালিকায় এর কর্মকর্তাগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি আপনারা পৃথক অর্জনের জন্য পৃথকদিনে ভিন্ন কৃতিমাদেরকে একই পদকে ভুষিত করুন। তাতে জাতি পৃথকভাবে পরিস্কারভাবে সঠিক মূল্যায়নের প্রকৃত ধারণা লাভ করবে এবং আলাদা আলাদা মর্যাদায় অভিসিক্ত হবে ভাষাসৈনিক মৌলভী আশরাফুদ্দীন মাস্টার ও লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা দই বিক্রেতা জিয়াউল হক গং কৃতিমানরা।