কিশোরগঞ্জ জেলাাধীন নিকলী উপজেলার বড়হাটি গ্রামের খায়রুল ইসলাম চিরবিদায় গ্রহণ করেছেন। ফেসবুকে তার ছেলে নাজিউল আলম দিবস এক পোস্টের মাধ্যমো সবাইকে অবগত করেছেন।
খায়রুল ইসলাম বাদল বহু প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন তার সংগ্রামী জীবনে। প্রতিবন্ধীর প্রতিবন্ধকতা কাউকে পরাজিত করতে পারেনা তার এক জাজ্বল্যমান প্রমাণ তিনি।
অপরের কোনো সংগ্রামী কর্মধারাতেও চোখ রাখতেন নিরন্তর। তিনি মেলাতেন নিজের সংগ্রামী জীবনের সাথে অপরের সংগ্রামী জীবন। তাই আপ্লুত হয়ে তিনি আমাকে বলতেনঃ রেজা ভাই, "আপনি কীভাবে সম্ভব করলেন এত এত সাংবাদিকদের কলম ভেদ করে স্বাধীনতা বিরোধীদের ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত করার জায়গায় পৌঁছেদিলেন। আপনাকে দেখতে ছোটো একজন মানুষ দেখছি,কিন্তু কলজেটা দেখতে পারলে ভালো হতো।"
কী তার উপলব্দি, কী তার অনুভব!
যার সৃষ্টিশীলতা শুধু অঙ্কনে নয়, গানে কবিতায়ও। আর ছড়ায় ছিলেন অবিশ্বাস্য বাচন ভঙ্গির ছান্দসিক স্রষ্টা। বালু-সিমেন্টের নকশায় অপূর্ব নান্দনিক পরিকল্পক, তাতে তুলির আচঁড়ে আঁখি জুড়ানো রঙ্গের এক নিঁখুত শিল্পী।
তিনি পানিতে ভাসেন, আবার গান করেন। তিনি প্রতিবন্ধী হয়েও বলেন, "আমার হাত-পা বাঁধো এবং পানিতে ছেড়ে দাও।" উৎসুক্যরা তাই করলেন এবং পানিতে ছেড়ে দিলেন। এ অবস্থায় তিনি ডুবেননি। অভিনব বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে তিনি ভাসলেন। তাক লাগালেন শত শত দর্শককে ভেসে ভেসে বাঁশিও বাজালেন। কী তাজ্জব ব্যাপরই ঘটালেন তিনি। বাচ্চু শিল্পীকে দিয়ে তিনি কত গানই না গাওয়াতেন । আর নেহাল পার্কের কারুকাজের কথা নাই বল্লাম। এমন কারোকাজ কিশোরগঞ্জ শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা জায়গায়। তার সুকুমারবৃত্তির শৈল্পিক নিদর্শন গুলোর বদন্যতায় কিশোরগঞ্জের সকল প্রজ্ঞা ও আস্থাশীল মানুষের মন জয় করতে পেরেছিলেন। তিনি ২০১৩সালে হয়েছিলেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার বলিষ্ঠকর্মী। দৈনিক কিশোরগঞ্জ পত্রিকায় তিনি বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করতেন। যে সব রাজাকারের ফাঁসির রায় হয়েছে সেইসব রাজাকেরদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হওয়া প্রতিটি নিউজ কাভার করতে সচেষ্ট ছিলেন। আমার বাবা হাবিবুর রহমান স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের তথ্যপ্রেরক ছিলেন শুনে এমন খুশি হয়েছিলেন যে, আমার বাবার মৃত্যুর খবর বড় হেডিং করে দিয়েছিলেন দৈনিক কিশোরগঞ্জ পত্রিকায়। আর তিনি আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হবার তথ্য জানতে সচেষ্ট থাকতেন বারবার।
তিনি আমার কয়েকটি ব্যানারও করে দিয়েছিলেন। সদা-সর্বদা হাস্যময়ী ভাব সকলের মনকে স্পর্শ করতো। কালো কোঁকড়ানো চুলগুলো বলে দিতো তিনি মানুষের ওপরে আরো অনেক কিছু।
তিনি আমাকে একটি আবদারও করেছিলেন, বাচ্চুশিল্পীর বাবার ব্যাপারে। নেগেটিভ কিছু বলতেন না। তিনি বলতেন মোসলেম প্রধান নামের ব্যক্তি যদি স্বাধীনতার বিপক্ষে ধ্বংসাত্মক কিছু করে থাকে তাহলে তার শাস্তি হোক। আর যদি কোনো দোষ না করে থাকেন তাহলে যেন তিনি মুক্তি পান। কারন তার ছেলে বাচ্চুর ভেতর দিয়েই আমার প্রকাশ। বাচ্চু আমার সকল গানের বিকাশ ঘটিয়েছেন। আমি অন্যায় কোনো আবদার করবোনা। ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনি অপরাধকে অপরাধ হিসেবেই দেখতেন। তা না হলে এমন কথা বলতে পারতেন না।
তিনি ওনার মায়ের অসুস্থতার চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ শুনতে হলো তার দুঃসংবাদ।
শনিবার দিবাগত রাত ১২:২০ ঘটিকায় তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আমরা হয়তো খায়রুল আলম বাদলকে আর দেখবোনা কিন্তু দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকবেন মানুষের মণিকোঠায়।কারণ তার সৃষ্টিশীল কর্ম তাকে বাঁচিয়ে রাখবে দীর্ঘদিন। তার কর্মের মধ্যে কারুশিল্প,মৃৎশিল্প, সুরারোপের নৈপুণ্যতা ,পদ্য ও ছড়া রচনা, সঙ্গীত চর্চাসহ অগণিত সৃষ্টিশীলতা খায়রুল ইসলাম বাদলকে যুগ যুগ ধরে অমর করে রাখবে। এ কৃতিমানকে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার ২৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২১সালের ০৯নভেম্বর তার সৃজনশীল কর্মের জন্য "প্রথম আলো সম্মাননা স্মারক" প্রদান করা হয়।
আল্লাহপাক খায়রুল আলম বাদলের আত্মাকে শান্তিময় করে দিন সেটাই কামনা করছি।