প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ৭:৫৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ৪, ২০২৪, ৫:২৭ অপরাহ্ণ
চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে ছোটো ভাইয়ের কাছ থেকে বড় ভাই হাতিয়ে নিয়েছে ১০লক্ষ টাকা। টাকা চাওয়ায় এখন স্বপরিবারে ঘর ছাড়া ছোটো ভাই।।

ভোরের আলো ডেস্কঃ
"ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন" দু'ছত্রের কথাটি গেঁথে আছে সবার মনে। কারণ ভাইয়ের সুখে-দুখে একমাত্র রক্ত সম্পর্কীয় আপন ভাইয়েই পাশে দাঁড়ায়। একে অপরের জন্য জীবন পর্যন্ত দেয়। তবে হরহামেশাই তার ওল্ঠো ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
এমন এক ঘটনার বাস্তবতা পাওয়া গেছে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলাধীন যশোদলের কুতকাইল গ্রামে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়,ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিন একজন প্রাইভেট গাড়ীর ড্রাইভার। আর বড় ভাই নাসির উদ্দিন ঢাকা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামার বাড়িতে কৃষি অফিসের গাড়ী চালক হিসেবে বেশ সুখ ও যশ অর্জন করেন। কিন্তু প্রাইভেট কারের ড্রাইভার হিসেবে ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিন বেশ কষ্টেই দিনাতিপাত করছিলো দেখে বড় ভাই নাসির উদ্দিনের মন বিগলিত হয়। নাসির উদ্দিন ছোটো ভাই সম্পর্কে ভাবনার সময় সে চাকুরি হতে অবসরে ছিলো। চাকুরির সুবাদে অনেক বড় বড় অফিসারের সাথে পরিচয় আছে বিধায় ছোটো ভাইয়ের কষ্ট লাঘবে কিছু একটা করার জন্য মনে মনে ভাবে।
তাই ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিনের প্রতি দয়া পরবশ হয়ে বলে ওঠে, ভাই, তুমি প্রাইভেট গাড়ী চালিয়ে খুব কষ্টে আছিস দেখে আমার খুব খারাপ লাগে। আমি সরকারি অধিদপ্তরে গাড়ীর ড্রাইভার পদে কাজ করে বড় বড় অফিসারদের সাথে আমার সখ্যতা গড়ে ওঠেছে। তুমি চাইলে আমি তোমাকে সরকারি নিয়োগকৃত ড্রাইভিং পোস্টে চাকুরি নিয়ে দিতে পারি। আমার পরিচয় ও সুপারিশের জন্য তোমার চাকুরি হবে। এভাবে বলে কয়ে বড় ভাই ছোটো ভাইকে সরকারি ড্রাইভিং পদে চাকুরি দিতে পারবে বলে আশ্বস্থ করে। এ-ও বলে যে, "অবিলম্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ড্রাইভিং পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে। তুমি যদি রিটেন বা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারো তবে তোমার ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করার দায়িত্ব আমি নিলাম। তবে বিভিন্নভাবে খরচপাতির জন্য আমাকে ১০লক্ষ টাকা দিতে হবে।"
বড় ভাই নাসির উদ্দিনের কথা মতে নিয়োগবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে তাতে তার ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিন অংশ নেয়। পরে রেজাল্ট শীটে দেখা যায় লিখিত পরীক্ষায় সে পাশ করেছে। খুশি হয়ে সালাহ উদ্দিন তার লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার খবরটি বড় ভাই নাসির উদ্দিনকে জানায়। নাসির উদ্দিনও বেশ খুশি হয় এবং বলে ওঠে যে, "তাহলে আর কোনো চিন্তা নাই। এখন ভাইবা বা মৌখিক পরীক্ষা দাও। আমি মৌখিক পরীক্ষায় তোমার পাশের ব্যবস্থা করতেছি। তুমি আর দেরি না করে শিঘ্রী ১০লক্ষ টাকা নিয়ে আসো। " বড় ভাইয়ের কথা মতো ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিন বিভিন্নভাবে টানাটানি করে অতিকষ্টে ১০লক্ষ টাকা যোগাড় করে এবং ২০২১ সালের ১১ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ১১টার সময় বড় ভাই নাসির উদ্দিনের হাতে পাঁচলক্ষ টাকা এবং তার স্ত্রী মোছাঃ শারমিন আক্তারের কাছে আরো ৫লক্ষ টাকা বেশ ক'জনের সামনে তুলে দেয়। মোট ১০লক্ষ টাকা প্রদানকালে ছোটো ভাই সালাউদ্দিন তার বড় ভাইয়ের কাছে একটি লিখিত স্বীকারোক্তি দাবি করে। তখন বড় ভাই নাসির উদ্দিন বলে ওঠে যে, "আমি তোমাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। তুমি আমাকে অবিশ্বাস করলি?"
তখন ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিনের কোমল মন দূর্বল হয়ে পড়ে। রক্তের বাঁধন বলে কথা। বড় ভাই নাসির উদ্দিনের কথায় ছোটো ভাই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে এবং একই রক্তের বলে আত্মবিশ্বাস জমে ওঠে তার মনে। তাই কোনো প্রকার লিখিত স্বীকারোক্তি ছাড়াই ছোটো ভাই বড় ভাইকে ১০লক্ষ টাকা প্রদান করে। বড় ভাই ছোটো ভাইকে আরোও আশ্বস্থ করার জন্য বলেন, "যদি কোনো কারণে তোমার চাকুরি না হয় তবে আমি তোমার ঘরে এসে তোমার পুরো ১০লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে যাবো।"
এ কথায় ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিন আরো বেশি আশ্বস্থ হয়। পরবর্তীতে ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিন ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু দূর্ভাগ্য যে, লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলেও সালাহ উদ্দিন মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি। ভাইভায় পরীক্ষায় ফেল করার রেজাল্ট দেখে সে অবাক হয়। বড় ভাই নাসির উদ্দিনকে জিজ্ঞেস করে, "ভাই, তুমি না বলছিলে, আমি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তুমি আমাকে মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করার ব্যবস্থা করবে? আমি তো ফেল করেছি, এখন কী করবে?"
ছোটো ভাইয়ের কথা শুনে বড় ভাই নাসির উদ্দিন বলেন, "আমি দেখছি বিষয়টি কেন এমন হলো? আমি তোমাকে পরে জানাবো" এ কথা বলে ছোটো ভাইয়ের কাছ থেকে সময় নিতে থাকে। যতই সময় গড়াতে থাকে ততই ছোটো ভাই সালাউদ্দিনের মনে সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকে। বাড়তে তাকে উৎকন্ঠা,অবিশ্বাস ও বিড়ম্বনা। একদিন হঠাৎ করে ফোন করতে গিয়ে বন্ধ পায় বড় ভাই নাসির উদ্দিনের মোবাইল ফোন। বড় ভাইয়ের এমন এড়িয়ে চলার গতিবিধি দেখে ছোটো ভাইয়ের বুঝার আর বাকী নেই যে সে আটকে গেছে প্রতারণার জালে। ছোটো ভাই তখন স্পষ্টত বুঝতে পারে বড় ভাইয়ে দূরভীসন্ধীর প্রতারণা ! দিন যায়, মাস যায়, দেখতে দেখতে ৩টি বছর পার হয়ে যায় বড় ভাইয়ের নানা ফন্দি-ফিকিরের গ্যাঁড়াকলে! ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিনের ধৈর্যচ্যুতির এক পর্যায়ে চলতি ২০২৪ সালের ৮ফেব্রুয়ারি তার সাক্ষীদের নিয়ে বড় ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। উপস্থিত সবাই বড় ভাই নাসির উদ্দিনের কাছে তখন জানতে চায় " কেন তার কথা মতো সালাহ উদ্দিনের চাকুরি হয় নাই বা চাকুরি দিতে পারে নাই?" নাসির উদ্দিন তখন কারো কথার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। ফলে সবাই নাসির উদ্দিনের কাছে ছোটো ভাইয়ের দেয়া ১০ লক্ষ টাকা ফেরত চায়। কিন্তু এ টাকা ফেরত চাওয়ায় ক্ষেপে যায় বড় ভাই নাসির উদ্দিন ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তার। তারা উভয়েই গলা হাঁকিয়ে বলেন, "তুমি আমার কাছে কোনো টাকা পাবেনা। আমি তোমার কাছ থেকে কোন প্রকার টাকা-পয়সা আমি নেইনি। " টাকা নেয়ার কথা শুধু তারা অস্বীকারই করেনি, তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই ছোটো ভাই ও সাক্ষীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে সবাইকে তাড়িয়ে দেয়। টাকার জন্য পুণরায় তাগিদ দিলে বড় ভাই নাসির উদ্দিন ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিনকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী প্রদান করে। ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিন ভোরের আলো বিডি কার্যালয়ে হাজির হয়ে আক্ষেপের স্বরে বলেন যে, " বড় ভাই সালাহ উদ্দিন আমার সরল মনের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে এবং আমার সাথে চরমভাবে প্রতারণা করেছে। আমি যদি জানতাম বড় ভাই নাসির উদ্দিন এরকমভাবে আমার মতো রক্ত সম্পর্কীয় ছোটো ভাইয়ের সাথে প্রতারণা করবে তাহলে মোটেও আমি তাকে বিশ্বাস করে ১০লক্ষ টাকা তার হাতে তুলে দিতাম না। আমি এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অর্থনৈতিক দৈন্যতায় দারুণভাবে অর্থকষ্টে আছি।

বড় ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা ফেরত পাবার সকল পথ বন্ধ হলে উপায় না পেয়ে আমি মহামান্য আদালতে গত ২২এপ্রিল-২০২৪ তারিখে একটি মামলা করেছি। আমার মামলাটি আমলগ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং ১কিশোরগঞ্জ --৪০৬/৪২০/৫০৬ ধারায় গ্রহণ করেছে। অন্য অভিযোগে আমার বৃদ্ধ বাবা মোঃ সিরাজ উদ্দিনও ৩২৩/৪৪৮/৩০৭/৩৮০/৫০৬ ধারায় বড় ভাই নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে।

আমার বড় ভাই নাসির উদ্দিন দূর্দান্ত প্রকৃতির লোক। তার স্ত্রীও অশ্লীল বাক্যবাণে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত অশান্ত করে তুলছে। আমি সালাহ উদ্দিন একজন ভুক্তভোগী মানুষ হিসেবে মহামান্য আদালতে দৃষ্টান্তমূলক এর প্রতিকার চাই।" ভুক্তভোগী সালাহ উদ্দিন আদালতে মামলা করায় তাকে ঘর ছাড়া করেছে। প্রাণে মেরে ফেলার মতো বড় ভাইয়ের হুমকীতে ছোটো ভাই সালাহ উদ্দিন এখন মারাত্মকভাবে তটস্থ ! পালিয়ে বেড়াচ্ছে পথে-প্রান্তরে। রক্তসম্পর্কীয় এমন ভাইয়ের প্রতি প্রতারণা করা ও মেরে ফেলার হুমকীতে ন্যয্য বিচার কামনা করে এলাকাবাসীও।
Copyright © 2025 Vorer Alo BD. All rights reserved.