প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ১:২৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ৩০, ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ণ
ক্যানসারে আক্রান্ত অমানবিকতার প্রতীক মানুষটি জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে যাত্রী হলেন পরপারের!! একই সাথে প্রাসঙ্গিক বন্দনা !!

রেজাউল হাবিব রেজা/সম্পাদকীয়
এক বিয়োগব্যাথার শোকানুভুতি তৎপ্রাসঙ্গিকী নিয়ে আলোকপাত করছি।
আমার ও আমাদের গভীর ব্যাথার কথাগুলো প্রকাশ করা খুবই কষ্ট হচ্ছে। তবু বেদনার সাথে জানাচ্ছি যে,গুজাদিয়া রাম নগর নিবাসী মরহুম আব্দুল ওয়াহাব মাস্টার সাহেবের জৈষ্ঠ্য সন্তান হাবিবুর রহমান সেলু, গতকাল সোমবার সকাল ৮ ঘটিকায়, করিমগঞ্জ মোদকপাড়ায় ভাড়া বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।(ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন যাবত শয্যাশায়ী ছিলেন।
তা ছাড়া তিনি উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর করিমগঞ্জ শাখা সংসদের সাবেক নেতা ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মীও ছিলেন। তিনি শেষ সময়ে করিমগঞ্জ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটিরও তিনি একজন সদস্য ছিলেন।
তার মৃত্যুতে আমি ভোরের আলো সাহিত্য আসর ও কইঐসক'র পক্ষ হতে গভীর শোক প্রকাশ করছি ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। একই সাথে ওনার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
তার জানাজার নামাজ আছর বাদ গুজাদিয়া রাম নগর গোরস্তান সংলগ্ন মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এলাকার সাধারণ জনগণ,সামাজিক,সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক ও সাংবাদিক বলয়ের এক উল্লেখযোগ্য অংশ এতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রাসঙ্গীকীঃ মৃত্যু অনেকেরই হয়। হাবিবুর রহমান সেলুর পরপারের যাত্রা অনেকের মতো হলেও তার পেছনের গল্পটা খুবই মর্মান্তিক ও করূণ। তিলে তিলে দীর্ঘদিন তাকে মানা যন্ত্রণা পাড়ি দিতে হয়েছে। শারীরিক-মানসিক যন্ত্রণার অনেকগুলো সিঁড়ি তাকে পার হতে হয়েছে। প্রথম দুঃখের জায়গাটার কথা যদি বলি তবে তার পারিবারিক বিষয়টা চলে আসবে নিশ্চিত। পারিবারিক দুঃখের জায়গার কথা যেমন বাইরের লোক দ্বারা বেমানান, তেমনি তার বিচার করাও জটিল। শুধু আমরা বলতে পারি তিনি পারিবারিক ভাবে এক বিচ্ছিন্ন মানুষ ছিলেন। দ্বিতীয়তঃ তিনি তার এলাকা থেকে কর্মের প্রয়োজনে ছুটে আসছিলেন কিশোরগঞ্জ শহরে। পারিবারিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়া লোকের আরেকটা ভালোবাসার জায়গা থাকে, সেটি হলো তার নিজ পরিবার। সেই পরিবারকে যেভাবে সাপোর্ট দেয়ার দরকার ছিলো সেটি হাবিবুর রহমান সেলু পারেনি। অর্থনৈতিক সংকট এর কারণ। ১০/১২ বছরের এক সুদর্শন এক সন্তানও রয়েছে সেলুর। সন্তানকেও তার কাঙ্খিতভাবে গড়ে তোলার সময়-সুযোগ ও অর্থ যোগান তার হয়ে ওঠেনি। শিশুটি এখন পিতা-মাতৃহীন। সেলুর স্ত্রীও মারা গেছে কিছুদিন আগে। তার স্ত্রী মারা যাবার কিছুদিন পর সেলু সঙ্গীহীন হয়ে পড়েন। একজন পিতা হিসেবে মাতৃহীন শিশু ছেলের দেখভাল করা ও নিজের প্রতি খেয়াল রাখারও সঙ্গতি সেলুর ছিলোনা। সেলু ছিলো ক্যানসারে আক্রান্ত সেটা সবাই জানে। অর্থ ও সহায় সম্বলহীন সেলুর এ অবর্ননীয় দুঃখ যাতনা দেখার মতো কেু ছিলোনা। সেলুর জ্ঞান থাকা অবস্থায় যে মর্মপীড়ায় তাকে ভূগতে হয়েছে তা লেখার ভাষা আমার জানা নেই। তদুপরি সাংবাদিক সমাজের কেউ কেউ তাকে অধিকতর কষ্ট দিয়েছে। কেউ কেউ বলছি এ কারণে যে, সেলুর মা প্রদত্ত ৬ লক্ষ টাকা এক সাংবাদিককে দিয়েছিলেন। সেলু বেচে থাকতে আমার কাছে বলছিলো যে, ওই সাংবাদিকের কাছে মায়ের ৬লক্ষ টাকা কীভাবে কাজে লাগাবে সেই পরামর্শের জন্য আসছিলো। সরল মন নিয়ে এ পরামর্শ চাইতেই তাকে একটি বাসক্রয়ে সম্পৃক্ত হওয়ার পরামর্শ দেয়। ওই কথিত সাংবাদিক তাকে বুঝালেন যে, দুজনের যৌথ টাকায় একটি বাস ক্রয় করলে প্রতিদিন তার ভাড়া বাবত যে টাকা পাবে তা দিয়ে সেলু তার মাও পরিবার নিয়ে চলতে পারবে। সেই পরামর্শ অনুায়ী সাহেবে ৬ লক্ষ টাকা সাংবাদিককে প্রদান করে।এ টাকায় শেয়ার হিসেবে সাংবাদিক একটি বাস ক্রয় করে। কিন্তু বাসটি চালু করলেও সাংবাদিকের কথামতো টাকা না পেয়ে সেলু হতাশ হয়ে পড়ে। সে একদিকে ক্যানসারে আক্রান্ত। অপরদিকে মায়ের টাকার চাপ। পাশাপাশি তার সন্তান ও স্ত্রীর চাহিদা মেটানোর মতো অসক্ষম বিধায় চাপা কান্নায় তার দিন যায়। অর্ধাহারে অনাহারে জীর্ণ-শীর্ণ বস্ত্রেও তার সময় অতিবাহিত হচ্ছিল।অথচ তার ৬লক্ষ টাকা পড়ে থাকে ওই সাংবাদিকের হাতে। অনেক দেন-দরবার করে কিছু টাকা আদায় হয়েছিলো ওই সাংবাদিকের কাছ থেকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সেলুর এমন দূরাবস্থায় ওই সাংবাদিকের প্রতি কেউ কড়া হতে পারেনি, এ কারণে তার সঙ্গও ছাড়তে দেখিনি। আমরা ১৯৭১ সনের কাহিনী শুনে নির্মমতার যে চিত্র পাই সেই একই নির্মমতার চিত্র দেখতে পেয়েছি সেই সাংবাদিকের মাঝে।কিছু সাংবাদিক এখনও আছে তার সাথে দারুণ সখ্যতায়। অপরদিকে ওরাও ছিলো সেলুর প্রতি সহানুভুতিশীল। কিন্তু অর্ধেকের কাছাকাছি টাকা নিয়ে ওই সাংবাদিকের প্রতি একটু সহানুভুতি দেখিয়ে বাকী টাকা মাফ পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করে অন্য সাংবাদিকরা। সেই সাংবাদিকের দুটি বাস, দখলকরা জায়গা-জমি, সরকারি জায়গায় বিনা ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ওই সাংবাদিক অর্ধেকের চেয়ে বেশি টাকা মাফ পায়। ভাবতে আশ্চর্য লাগে যে, সাংবাদিকরা নাকি জাতির বিবেক ! যে সাংবাদিকের নিজের বিবেক নেই সে আবার ওাতির বিবেক হয় কেমনে? এটাই আমাকো আজ ভাবাচ্ছে। অন্য সাংবাদিকরাও তাকে অনেক টাকা বাঁচিয়ে দিলো। যারা সাংবাদিকের ঋণ মওকুফে তৎপর ছিলো কোন বিবেকে এ কাজটি করলো বুঝতে কষ্ট হয়। যে মুহুর্তে হাবিবুর রহমান খাওয়া পচ্ছেনা, বস্ত্র পাচ্ছেনা, তার ঔরষজাত শিশুকে কিছু কিনে দিতে পারছেনা সেই মানুষটিকে তো পুরো টাকাই দিয়ে দেয়ার দরকার ছিলো। প্রয়োজনে বিবেকের তাড়নায় সবার দ্রোহ করার দরকার ছিলো। তার সাথে দেখেছি ভালো মানের শিল্পীরও সখ্যতা। যে শিল্পী অন্যায়ের বিরুদ্ধে দ্রোহ করে গানের মাধ্যমে সেও দেখি হাস্য বদনে মধুর সম্পর্ক বজায় আছে। গতকাল ২৯ জুলাই ঋণী সাংবাদিককে দেখলাম সেলুর লাশ দেখার জন্য ছুটে এসেছে। ভাবছিলাম সেলুর প্রয়াণে তার মর্মব্যাথার কথা তুলে ধরবে। ভেবেছিলাম হয়তোবা সেলুর এয়াতিম সন্তানের হাতে কিছু অর্থও তুলে দিতে পারেন। কিন্তু নিরাশ হলাম। আমার ধারণা ও আশাবাদ ভুল প্রমাণিত হলো। সাংবাদিক হলেই জাতির বিবেক একথাটি সত্য নয়। যাক সেলু এখন মুক্ত। আল্লাহপাক তাকে মাফ করে দিন ও পরপারে তাকে শান্তির জায়গায় পৌঁছে দিন। এটাই কামনা করি।
Copyright © 2025 Vorer Alo BD. All rights reserved.