বার্তা সম্পাদক ( ভোরের আলো বিডি ডেস্ক )ঃ
কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। এ মসজিদে নয়টি লোহার দানবাক্স আছে। প্রতি তিন মাস পর পর খোলা হয় দানবাক্সগুলো। এবার চার মাস ১১ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। মসজিদের দানবাক্সে এবার সর্বোচ্চ রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা মিলেছে।
শনিবার (১৭ আগস্ট ) ২০২৪ সকাল ৮টা্র দিকে অতিতিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহবায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্বাবধানে এই দানবাক্স গুলো খোলা হয়। জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ এবং সেনাকর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে চলতি বছরের শনিবার (২০ এপ্রিল) ২০২৪ সকাল ৮টা্র দিকে অতিতিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহবায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্বাবধানে এই দানবাক্স গুলো খোলা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।
এর আগে গত বছরের শনিবার (৯ ডিসেম্বর) ২০২৩ সকাল ৮টা্র দিকে অতিতিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহবায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্বাবধানে এই দানবাক্স গুলো খোলা হয়েছিলো। তখন উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।
তখন ৯টি দানবাক্স থেকে ২৩ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাথে পাওয়া গেছে বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনা-রুপার গয়না। দিনভর গণনার শেষে হিসেব পাওয়া গেল ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা টাকা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
এর আগে শনিবার (১৯ আগস্ট) ২০২৩ ৮টি দানবাক্স থেকে ২৩ বস্তা টাকা মিলেছিলো। সাথে পাওয়া গিয়েছিলো বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনা-রুপার গয়না। দিনভর গণনার শেষে হিসেব পাওয়া গেল ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা টাকা।
এছাড়া ঐ বছরের (৬ মে) ২০২৩ চার মাস পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ১৯টি বস্তায় ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া একই বছরের ৭ জানুয়ারি ২০২৩ ৩ মাস ১ দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন ২০টি বস্তায় ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া যায়।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, শনিবার (২০ এপ্রিল) ২০২৪ সকাল ৮টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ৯টি দান দানবাক্স খোলা হয়েছে। দান দানবাক্সগুলো খুলে ২৭টি বস্তায় ভরে টাকাগুলো মসজিদের দোতলায় আনা হয়েছে গণনার জন্য। সারাদিন চলছে গণনার কাজ।
টাকা গণনার কাজে অতিতিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট,মসজিদের পেশ ইমাম,রূপালী ব্যাংকের স্টাফ,মাদরাসার ছাত্র,মসজিদ কমিটি সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অংশ নিয়েছেন।
মসজিদের খতিব, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন সূত্রে জানা যায়, এ মসজিদে মানত করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ মসজিদে দান করে থাকেন।
জনশ্রুতি আছে, এক সময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম-হিন্দু নির্বিশেষে সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।
কিন্তু ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দান খয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এ মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা,স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এমনকি বৈদেশিক মুদ্রাও দান করেন।
মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ,মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
Leave a Reply