প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ১১:৩১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ২, ২০২৫, ১:০৫ অপরাহ্ণ
ঈদ-উল-ফিতর এর ইমামতির পুনরায় দায়িত্ব পেলেন মুফতি মাওঃ একেএম ছাইফুল্লাহ

মোঃ রেজাউল হাবিব রেজা
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিগত সরকার মুফতি মাওলানা ছাইফুল্লাকে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ থেকে চ্যুত করেছিল বেআইনি ভাবে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে চ্যুত হওয়া ইমামকে পুনর্বহালের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে মুসুল্লী জনতা। সাংবাদিকরা লিখতে শুরু করে নির্যাতিত ইমাম ছাইফুল্লাহর পক্ষে। অবশেষে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সূচনা হলো নবদিগন্তের।ইমামতের প্রশ্নে বাদ পড়লো মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। আর অপরদিকে ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন ঈদগাহ শোলাকিয়া ইমাম হিসেবে মুফতি এ. কে. এম ছাইফুল্লাহকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। তিনি ১৬বছর পর তার এই অধিকার ফিরে পেয়েছেন।
আজ ১মার্চ রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ এরশাদ মিয়া জানান,
"এবার ঈদুল ফিতরের জামাতে ইমামতি করবেন মুফতি এ. কে. এম ছাইফুল্লাহ।" আজকের সভায় সভাপতিত্ব করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান। এ সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের
প্রশাসক মোছা. মুস্তারী কাদেরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, সেনা ক্যাম্পের মেজর
রায়হান, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রমজান আলী ও সেক্রেটারী মাওলানা নাজমুল ইসলাম, জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি প্রভাষক হাফেজ মাওলানা আলমগীর হোসাইন
তালুকদার, এডভোকেট জালাল মো. গাউস,পি পি, জেলা
বিএনপির সহ সভাপতি এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়া ও আমিনুল ইসলাম আশফাক, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন ও সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, জেলা গণ অধিকার পরিষদের নেতা অভি চৌধুরী প্রমুখ। সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে মুফতি এ. কে. এম ছাইফুল্লাহকে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়। এছাড়া হয়বতনগর এ.ইউ কামিল মাদ্রাসার
তফসির বিভাগের প্রভাষক মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাইকে বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে ।
মুফতি এ. কে. এম ছাইফুল্লাহ (কামিল হাদিস/ এমএ প্রথম শ্রেণি, কামিল ফিকহ/ এমএ প্রথম শ্রেণি, কামিল তাফসির/ এমএ প্রথম শ্রেণি, ইসলামিক স্টাডিজ এমএ ২য় শ্রেণি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এমএ দ্বিতীয় শ্রেণি (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়),
এমফিল ফোর্সওয়ার্ক ২০০২–২০০৫ ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ২০০৪ সন থেকে ২০০৯ সন পর্যন্ত শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি ২০০৯ সনের ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের নেতার হস্তক্ষেপে সে সময়ের জেলা প্রশাসক বৈধ ইমাম মুফতি এ. কে. এম ছাইফুল্লাহকে সরিয়ে দেয়। ওয়াকফ দলিলের নীতিমালা অনুযায়ী মুতাওয়াল্লীর সিদ্ধান্তের প্রতি তোয়াক্কা না করে সে সময়ের জেলা প্রশাসক ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে নিয়োগ দেন। এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দা ও মুসল্লিদের মধ্যে তখন উত্তেজনা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন বিপুল সংখ্যক
পুলিশ-র্যাবের ও বিজিবি মোতায়েন করতে বাধ্য হয়। এতেই প্রমাণিত হয় মুফতি এ. কে.এম. ছাইফুল্লাহর জনপ্রিয়তা। তার সকলের গ্রহণযোগ্য একজন আলেম ছিলেন। পিতা মুফতি, আলেম, মাওলানা এ. কে. এম নূরুল্লাহ শোলাকিয়া ঈদগাহের ৩০বছর যাবত অবৈতনিক ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সভায় ১৯৮ তম ঈদুল ফিতরের জামাত সকাল ১০ টায় শুরু হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দূরের মুসল্লীদের সুবিধার্থে ‘শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও সভায় জানানো হয়। সকালে একটি ট্রেন ভৈরব থেকে এবং অপরটি ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসবে কিশোরগঞ্জে। এ ট্রেন দুটু আবার জামাত শেষে পূর্ব গন্তব্যে ফিরে যাবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
Copyright © 2025 Vorer Alo BD. All rights reserved.