আজ ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভোরের আলো সাহিত্য আসর কীভাবে চলে?ইতিহাস মন্থন করে নেয়া।

একেক সংগঠন একেকভাবে চলে। তবে বেশিরভাগ সাহিত্য সংগঠন চলে অন্যের দয়া দাক্ষ্যিণ্যে। কোনো সাহিত্য সংগঠনের কর্মকর্তা একথা স্বীকার না করলেও আমি অকপটে তা স্বীকার করছি। তবে কোনো কোনো সংগঠনের দায়িত্বশীল সংগঠনের বাইরের কারো কাছ থেকে অনুদান পায়। তবে ভোরের আলো সাহিত্য আসর সংগঠনের বাইরে দু’একবার প্রকাশনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০হাজার টাকা নেয়া হয়েছিল করিমগঞ্জের সন্তান কৃষিবিদ মেজর (অবঃ) ড.মোঃ মুসলেহ উদ্দিন (বাবুল) পিএইচডি,এমবিএ(২০১৮) মহোদয়ের কাছ থেকে। প্রথম পর্যায়ে চেয়ার দিয়ে সহযোগিতা করছিলেন করিমগঞ্জের আমজদ হোসেন খান দিদার (২০০৯)। একটি প্রকাশনায় ৩হাজার টাকা দিয়েছিলেন শিল্পপতি এরশাদ উদ্দিন(২০১২)। আর পরবর্তী সময়ে ২হাজার আড়াই হাজার টাকা করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে। আর সংগঠন চালাতে শক্তি যুগিয়েছেন ভোরের আলোর উপদেষ্টা জনাব ফিরোজ উদ্দিন ভুইয়া ৫হাজার টাকার অনুদান দিয়ে। সংগঠন সৃষ্টি করা হয়েছে ২০০৮ সালে। এসময় সংগঠন কীভাবে চলতো তা অনেকেই জানেনা। আমি যখন এককভাবে সাপ্তাহিক খরচটা চালিয়ে যাচ্ছিলাম তখন সংগঠনের বর্তমান সভাপতি আজিজুর রহমান ভাই তা অনুধাবন করে ১০টাকা জমা রাখার সিস্টেম চালু করলেন। যাতে আমার ওপর এ চাপ না পড়ে। যদিও প্রতিষ্টাতা হিসেবে এ দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আমার ও আমার সংগঠনের পথ চলা। কিন্তু কিছু জমানো টাকায় দৃষ্টি কাড়ে অতি উৎসাহী কিছু লোকের। একটি বড় অনুষ্ঠান হয় ইসলামিয়া সুপার মার্কেটের সামনে। তাতে সংগঠনের মূল ব্যক্তিগুলো দাড়িয়ে থাকে ইসলামিয়া সুপার মার্কেটের বারান্দায়। প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমিও বারান্দায়। আজিজ ভাই,শিল্পী আবুল হাসেম ভাই, হাফিজ ভাই, বাহার ভাই, রুহুল আমিন ভাই,আমিন সাদী, মনোয়ার হোসেন রনি ও ইসাহাক ভাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজের ত্যাগের সংগঠনের প্রোগ্রাম দেখেন। উড়ে এসে জুড়ে বসার লোকজন তখন স্টইজের চেয়ারে। তারা ঢাকা হতে শুরু করে সব জায়গায় কালেকশন করে আরো কিছু টাকা সংগ্রহ করে। আগের জমানো টাকা ও পরে সংগ্রহ করার টাকার হিসেব পেলামনা। কারন তখন সংগঠন চলে যায় আমাদের সাথে থাকা ত্যাগীদের আয়ত্বের বাইরে। কবি সাহাবুদ্দিন সাহেবের মৃত্যুর পর তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল বাশার। যাক সে কথা। এভাবে অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যি দিয়ে আমাদের ২০২২ পর্যন্ত আসা। ২০০৮সাল হতে সংগঠনের কার্যালয় পরিবর্তন হয় ৪বার। আংশিক নাম পরিবর্তন হয় ৩ বার। এ গেল স্থান ও নামের ইতিহাস। রয়ে গেল নতুন উদ্দীপনার ইতিহাস। যা ২০১৫সাল থেকে নবরূপে যাত্রা শুরু। এতে যুক্ত হন বিআরডিবির পরিচালক জনাব মোঃ নিজাম উদ্দিন,ব্যাংকার মোতাহের হোসেন,ডাঃ এমএ হালিম তালুকদার,ফিরোজ উদ্দিন ভুইয়া, মোঃ শফিউল আলম, মোঃ মেহের উদ্দিন, শফিক কবীর, ফারুকুজ্জামান,এম এ হানিফ, ডাঃ হিরামিয়া, সুবর্না দেবনাথসহ আরো অনেকে। এতে সংগঠনটি আবার নতুন মোড় নেয়। কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীদের বসার জন্য চেয়ারের প্রয়োজনে জনাব নিজাম উদ্দিন (বীর মুক্তিযোদ্ধা) এক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এতে ১৭টি চেয়ার সংগ্রহ করা হয়। জনাব নিজাম উদ্দিন, আজিজ ভাই, মোতাহের ভাই মিলে একটি সাউন্ডবক্সও কিনেন। কিন্তু তা চুরি হয়ে যায়। পরে আমি নিজে আড়াই হাজার টাকা ও ডাঃ হিরামিয়ার সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে মোট ৬হাজার টাকায় একটি সাউন্ডবক্স ক্রয় করি । তা ছাড়া আমাদের খরচ খুব একটা নেই। একটি প্রকাশনায় করোনাকালীন সময়ে আমরা বিপদে পড়ি। আমার স্ট্রোক হয়। সংকলন ছাপানোর কথা। কিন্তু যেভাবে প্রকাশ করার কথা সেভাবে হয়নি। ফটেস্ট্যাট করে তিন ভাগের দুই ভাগ পাতা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্ত আমাকে যে বিষয়টি পীড়া দেয় সেটি হলো কৃষিবিজ্ঞানী মহিউদ্দিন ভাইয়ের লেখাটি ছাপাতে পারিনি। ওনারও অনুদান ছিল ৫হাজার টাকা। সংগঠনের কাজে টাকা ব্যয় হয়েছে। করোনাকালে প্রকাশনার কাজে ঝামেলায় পড়েছিলাম। কম্পোজ করতে হয়েছে কয়েকবার। প্রতিবার কম্পোজ করার সময় টাকা পরিশোধ করেছি। আবার তা ফটোকপি করে তিনভাগের দুইভাগ প্রকাশ করে প্রকাশনা দেখিয়েছি। এখন সেই ঝামেলার ভয়ে প্রকাশনা আর হচ্ছেনা। এ সংগঠন প্রতিভাবানদের জন্য সংবর্ধনা দেয়। নবাগত দায়িত্বশীলদেরকেও উৎসাহ প্রদান করতে ক্র্যাস্ট ও পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় । কিছুদিন আগে জেলা পাবলিক লাইব্রেরির ১৫জনকে ক্র্যাস্ট দেয়া হয়। এতে অনুদান দেন আবাসিক কনসাল্টিংর এর স্বত্ত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন। তিনি ১০হাজার টাকা দান করেন। তিনি আমাদের সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা বিআরডিবির সাবেক পরিচালক মোঃ নিজাম উদ্দিন মহোদয়ের জামাতা হন। জনাব নিজাম উদ্দিন মহেদয় নিজেও ১হাজার টাকা দিয়ে যুক্ত হন। সেই অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি নাট্যকার আজিজুর রহমান ভাইয়ের স্থলে জনাব নিজাম উদ্দিন মহোদয়কে সভাপতি করা হয়। ভোরের আলোর সভাপতি আজিজুর রহমান ও জহিরুল হাসান রুবেলকেওএতে ক্র্যাস্ট ও সম্মানা দেওয়া হয়। আরেকটি ক্ষুদ্র প্রকাশনা সম্প্রতি হয়েছে। ফৌজিয়া জলিল ন্যান্সির সহযোগিতা ও প্রেরণা এতে ছিল। প্রকাশনা এভাবেই সংগঠনের প্রয়োজনে দান অনুদান চলে আসছিল। এবার সেই গতিটা কিছু শ্লথ হয়। কিন্তু সাপ্তাহিক খরচ তো হচ্ছে। চা-রুটির আপ্যায়ন প্রতি সাপ্তাহের একটি খরচ আছে। সেটা কেউ কেউ নিজে দিয়ে দিতো । কিন্তু এখন সেই আগ্রহটা অনেকেই হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু সংগঠন বসে নেই। হয়তো প্রতি সপ্তাহে চা-রুটিতে ২ শত বা আড়াইশত টাকা হয়। সেটা আমি চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু কিছু ব্যানার হয় যা কেউ জানেনা। আমি সেটা করে ফেলি। ১৫ আগস্ট প্রতিযোগীদের পুরস্কার দিতে হতে হবে। খরচ মাত্র ১৫০০/ টাকা। তাও আমি করেছি। হয়তোবা অন্যরাও পরে আবার ব্যক্তিগতভাবে সংগঠনের জন্য খরচ চালিয়ে যাবে। সেটা যার যার ইখতিয়ারের ওপর নির্ভরশীল। কিম্তু আগের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এতে কোনো ফান্ড করার ইচ্ছে নেই। কেউ সংগঠনের জন্য খরচ করুক আর না করুক সংগঠন বসে থাকবেনা। বিগত ১৪বছর বসে থাকেনি। সংগঠন চলছে চলবে দূর্বার গতিতে। তবে দায়িত্বশীল কম থাকাই ভালো মনে করছি। কিন্তু সংগঠন চলবে সুনির্দিষ্ট লক্ষে ও নিয়ন্ত্রণে। সেই দিকেই এগুচ্ছে ভোরের আলো সাহিত্য আসর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category