আজ ১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

২৩ ও ২৪শে নভেম্বর-২০২২ জেলা সাহিত্য সমাবেশে সাংবাদিকরা অসাহিত্যিক বলে প্রতীয়মান ও জাহান বন্দনা নিয়ে কিছু স্পষ্ট কথা।

রেজাউল হাবিব রেজাঃ
—————–

গত ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো সাহিত্য সম্মেলন। শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায়ই তা
একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এভাবে এটাই প্রথম। সাহিত্য সমাজের শতধা বিভক্ত সাহিত্যাঙ্গণকে একই প্লাটফর্মে আনার অভিপ্রায়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সাহিত্যাঙ্গণ তথা লেখক সমাজ নিয়ে অনেক কথাই চালু আছে আমাদের সমাজে সে কথায় আমি যেতে চাইনা। তবে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কোনো লেখক হিসেবে এ সাহিত্য সমাজে সাংবাদিককে দাওয়াত করেনি উদ্যোক্তারা। যদিও শিল্পী সমাজকে লেখক সমাজের অন্তর্ভুক্ত করে তাদেরকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। যারা সাংবাদিক তারা সংবাদ পাঠানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়েজনীয় বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত কোনো কোনো অঞ্চলের বিষয়াদি তুলে ধরে থাকেন প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায়। অনেক পর্ব থাকে সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে। প্রিন্টডিয়ার প্রতিদিনের সম্পাদকীয় বা উপসম্পাদকীয়তে থাকে সমকালীন ভালোমন্দ নিয়ে তথ্যভিত্তিক নানা বিষয়াদীর ভান্ডার। এ লেখাগুলো থেকে সুবিন্যস্ত ও সুখপাঠ্য হিসেবে আমাদেরকে অনেক ধারণা দিচ্ছে সাংবাদিকরা। সম্পাদকীয়গুলো একত্র করে প্রবন্ধ বা নিবন্ধ কিংবা রসবোধের গল্পাকারে গ্রন্থবদ্ধ করে প্রকাশ করছে। তাহলে কী তারা এসব করেও লেখক সমাজের বাইরে? অনেক সাংবাদিক আছেন যারা কবিতা লেখেনা,ছড়া লেখেনা,গল্প লেখেনা,নাটক লেখেনা,গানও লেখেনা, কিন্তু তাদের লেখায় যে সমাজচিত্র প্রকাশ পায় সেই লিপিবদ্ধ প্রকাশ কী সাহিত্যের অংশ নয়? এটা কী অসাহিত্যিক কাজ? এ প্রশ্ন রাখলাম সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ সাহিত্য সম্মেলনে আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত সকল কর্মকর্তার কাছে। এটা লেখার জন্য আমি তাগিদ অনুভব করছি কিশোরগঞ্জের সাহিত্য সমাবেশে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি কামাল ভাইকে একজন লেখক হিসেবে আমন্ত্রিত না পাওয়ায়। তিনি সাংবাদিক বা সাংবাদিক সমাজের একজন মহৎ ব্যক্তি। কিন্তু ছড়া,কবিতা,নাটক লেখেন না বলে তিনি লেখক নন। লেখক হিসিবে আমন্ত্রিত নন। বিষয়টি আমাকে খুবই ব্যথিত করেছে।এমন অনেক সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছে সাহিত্যিক হিসেবে নয়,সাংবাদিক হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে। আমি জানি যাদের লেখা প্রবন্ধের ন্যায় প্রকাশ হয় পত্রিকায় তারাও লেখক। তারা হয়তো রিপোর্ট আকারে তুলে ধরেছে কিন্তু তুলে ধরা এসব লেখায় নিখুঁত শিল্প থাকে, মনকাড়া উপস্থাপন থাকে, নিউজের কারিশমায় পাঠককে চমকে দেবার মতো বুদ্ধি ভিত্তিক লজিক থাকে। প্রয়োজনে বাক্যের মাঝে জুড়ে দেয়া হয় বাক্যালংকার। তবু এরা লেখক নয়। এ সম্মেলন বাস্তবে আমাদের লেখক কাকে বলে তার নতুন অভিধান আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে, যাতে পরোক্ষভাবে বলা হচ্ছে তারা লেখক নন। আমার মনে হয় মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে কেনো আমলা “সাংবাদিকরা লেখক নয় এই মর্মে কিছু ভুল বুঝিয়েছে।” এসব সাহিত্য সমাবেশে কিশোরগঞ্জের সাংবাদিক কামাল ভাইয়ের মতো ছড়া-কবিতা-নাটক না লেখা এমন আরো কামাল ভাইকে ৬৪ জেলার সাহিত্য সমাবেশে সাংবাদিক হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমন্ত্রণ জানিয়েছে শুধু অসাহিত্যিক ও একজন তথ্যসংগ্রহ ও রিপোর্টকারী উপস্থিত থাকতে। এটা সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বোদ্ধাদের অপূর্ণতা বলা যেতে পারে। এটা এক ভুল সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করছি। আয়েজনকারীরা সাংবাদিকদেরকে যদি সাহিত্যিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বুঝাতো তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মসূচীতে এমন ভুল করা সম্ভব ছিল না। তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এমন ভুল করতে পারেন না।

জেলায় জেলায় এসব সমাবেশ থেকে যা বুঝা গেল তা খুবই দুঃখজনক। কিশোরগঞ্জের সমাবেশে আয়েজকদের একজন বোদ্ধা যখন বলছিলেনঃ “সহিত শব্দ থেকে সাহিত্যের উৎপত্তি। অর্থাৎ একের সাথে অপরের মেলাবন্ধনে আবদ্ধ করে যে বিষয়টি সেটিই হলো সাহিত্য।”
আসলে কিশোরগঞ্জে কী সেই মেলাবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে? আমার তো মনে হয় কিশোরগঞ্জ কেন,কিশোরগঞ্জ ছাড়াও অন্য কোনো জেলায়ও সেই আকাঙ্খিত মেলাবন্ধন হয়নি। তবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এটা হওয়ায় পাশাপাশি বসার সুযোগ হয়েছে। যদিও একের সাথে অপরের অবস্থান ছিল যোজন যোজন মাইলের চেয়েও অনেক দূরত্বে।
অনুষ্ঠানে দেখা গেছে পছন্দের মানুষদের সাথে সেলফি তোলা আর অপছন্দের মানুষগুলো এতে তাকিয়ে থাকার দৃশ্য। মিলন মোহনায় একত্রে না দেখে যখন খন্ড খন্ড চিত্র নজরে এসেছে তখন এগুলো সাক্ষী হয়ে গেছে সমাবেশের বিক্ষিপ্ত চিত্রের নমুনায়।
অনুষ্ঠানে মিলন মেলায় আরেকটি লক্ষণ ফুটে ওঠেছে যে, এতে দেখেছি “জাহাঙ্গীর আলম জাহান বন্ধনায় যুক্ত হয়েছে কিশোরগঞ্জের অতিথি থেকে শুরু করে ঢাকা থেকে আগত অতিথিগনের বক্তৃতা মালায়।”
জাহান বন্দনা মেনে নেওয়া যেত যদি দেখতাম জাহাঙ্গীর আলম জাহানের নেতৃত্বে, ভোরের আলো সাহিত্য আসর, জেগে ওঠো নরসুন্দা, সন্দীপণ সাহিত্য আড্ডাসহ ইত্যাদি সাহিত্য সংগঠনের লেখকরা একত্রিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জের লেখক সমাজকে অনেক্যের মাঝে রেখে সাহিত্য মেলায় জাহাঙ্গীর আলম জাহান বন্দনার কী হেতু থাকতে পারে? সে একজন ছড়কার ও ছড়া নিয়ে চর্চা করে। ছড়া নিয়ে অনুষ্ঠান করে। একাত্তর সনের কাহিনী নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগায়। উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে ভালো। রক্তেভেজা কিশোরগঞ্জের শহীদ লেঃ আশফাকুস সামাদের ছবিসহ সামান্য তথ্য আমি দিয়েচিলাম। কিন্তু তথ্যসূত্র সে তা উল্লেখ করেনি। এমন কৃপণ হাতে একটি সাহিত্য সম্মেলনে তার বন্দনা আমরা শুনবো কেন?
তার মুক্তিযুদ্ধের লেখায় অনেক প্রশংসা আছে কিন্তু তার ছড়া সম্মেলনে ৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদেরকে হত্যাকারী, ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী এটিএম নাসির ও শামছুদ্দিনের সহোদর ভাই সাংবাদিক এটিএম নিজামকে এনে একটি পর্বের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় কীভাবে? এর কোনো জবাব আছে? সেই জাহানের বন্দনা আমরা শুনবো কেন?
বিগত মুজিব শতবর্ষের একটি প্রকাশনায় এক ভালো অবস্থানে ছিল এ জাহাঙ্গীর আলম জাহান। চক্ষু বন্ধ করে কী সে বলতে পারবে যে কিশোরগঞ্জের সব ছড়াকারদের লেখা এতে প্রকাশ হয়েছে বা তার ছোঁয়ায় সবার লেখা এতে স্থান পেয়েছে? জানা গেছে, সে নিজে যাদেরকে পছন্দ করেছে তাকেই সে কল দিয়ে তার ছড়া কার্যক্রমে বা জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশনায় সম্পৃক্ত করেছে। কিন্তু যাদেরকে সে কল করা অনুভব করেনি তারা কেন কোন আনন্দে এসব মিলন মেলায় তার প্রশংসার বন্দনা শুনবে? তার কাজের প্রশংসা স্বরূপ বাংলা একাডেমি কর্তৃক পুরস্কৃত করূক,আপত্তি নেই, সেটা তো আমাদের মতো বঞ্চিত ছড়াকার,লিমেরিক লিখিয়েদের ও কবিদেরকে শোনাতে হবে কেন? তার কাছ থেকে প্রেরণা পাওয়া নাকী? কিসের প্রেরণা? সাহিত্যিকদের মাঝে ঐক্যের নাকী বিভাজনের? তাকে ২১পদক দেয়া হোক, এটা কেন্দ্রীয় ব্যক্তিদের কাজ। সেই বিষয়ে আমাদের মতো শ্রোতাদেরকে শুনিয়ে সময় নষ্ট করে ক্ষতি ছাড়া লাভ কী হয়েছে?। অনেক কবি, ছড়াকার মনের দুঃখ নিয়ে ফিরে গেছে তাদের কবিতা ও ছড়া আবৃত্তি করার সময় না থাকায়। অথচ অনেক সময় চলে গেছে জাহান বন্দনায়। এটি জানি আমি ছাড়া কেউ এত স্পষ্ট করে তা বলবেনা। কারণ সবাই কানাকানির সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ।
যার ভগ্নিপতির ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে, আর তা থেকে মুক্ত করার জন্য তার সুপারিশ থাকে এমন ব্যক্তির কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা কী আর শুনবো? জাহানের ভগ্নিপতিকে নিয়ে আছে এমন অভিযোগ।
জাহানের ওপর একটি দায়িত্ব দেয়া থাকলে উপস্থাপন করে আরেকটি। তার ওপর দেয়া ছিল একটি প্রবন্ধ পাঠের দায়িত্ব। কিন্তু যে প্রবন্ধ তার জমা দেয়ার কথা তার বাইরে গিয়ে আবৃত্তি করলেন লোকজ ছড়া। শ্রোতারা তো প্রবন্ধ শোনার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু তারা কোনো প্রবন্ধ শুনতে পায়নি। লোকজ ছড়া যদি প্রবন্ধ হয় তাহলে প্রবন্ধকে ছড়া বলা হবে নাকী? এটা তো আমি মনগড়া বলছিনা। যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই তার প্রবন্ধের বদলে লোকজ ছড়া শুনেছে। তাই এ প্রশ্ন রাখলাম, একটির ওপর দায়িত্ব থাকা সত্তেও তিনি অন্য বিষয় উপস্থাপন করে কী করে? সাহিত্য মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষের কাছেও সেটি আমার প্রশ্ন? যদি বলা হয় লোকজ নিয়ে আলোচনা করলেও লোকজ ছড়াগুলো পাঠ করতে হয়। তবে আমি বলবো প্রবন্ধে লোকজ বিষয়ের ওপর আলোচনার বিষয়টি প্রাধান্য পাবার কথা, কিন্তু তার উপস্থাপনায় শ্রোতারা মুখস্থ করা লোকজ ছড়াগুলোই বেশি শুনেছে এবং লোকজ উপস্থাপক হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি যখন লোকজ ছড়াই পাঠ করবেন তখন উচিত ছিল প্রবন্ধ নয়, তিনি লোকজ ছড়া পাঠ করবেন বলে ঘোষণা দেয়ার দরকার ছিল।
উপস্থিত লোকজন তার লোকজ ছড়া শুনলেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন, অতীতের মানুষগুলো সেসময় ছড়া কেটে শ্লোক দিতো ঃ
যেমনঃ
ছোটো মুঠো দীঘিটা খৈএ ভুর ভুর করে,
ধইরা আনে, বাইন্ধা আনে তুইল্যা ছালাম করে।
বলুন তো এটা কী?
অথবা,
চার কানি দেয়া কাটার বেড়া
মাঝখানে পুলিশ খাড়া
বলুন তো এটা কী?
অথবা
অতবড় উঠানটা ভাই ফুরুইয়া নাই
এত ফুল ফুইট্যা রইছে তুলুইয়া নাই।
বলুন এটা কী?
সংক্ষেপে কয়েকটি শ্লোক বললাম। এগুলো ছড়ার মতোই গাঁথা। এসব শ্লোকগুলো কী লোকজ ছড়া নয়? তার ওইদিন কী শ্লোকের এসব লোকজ ছড়াগুলো কেউ শুনছেন? নাকি এগুলো কোনো ছড়ার আওতায় পড়েনা?
(চলবেঃ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category