আজ ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বহিস্কারাদেশে ইমামের লজ্জা !! পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ম্যানেজারের নির্লজ্জ অহমিকা !! এ দোষ কেবল ম্যানেজারের,না-কি সমাজের,না-কি ইমামেরও আছে?

সম্পাদকীয়

রেজাউল হাবিব রেজা

ঘুষ-দূর্নীতির বিরুদ্ধে বলায় কিশোরগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি জামে মসজিদ হতে ইমামতের দায়িত্ব হারালেন ইমাম। সোজা ভাষায় চাকুরী হারালেন। শুনতে খুবই খারাপই লাগে। মায়া জাগে ইমাম সাহেবের প্রতি। সত্য কথা বলার জন্য ওনাকে ধন্যবাদও দিবেন ও বীর মুজাহিদ বলে আখ্যায়িতও করবেন নিশ্চয়ই! 

এমন একটি আওয়াজ  কিশোরগঞ্জ  অনলাইন মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে  গতকাল থেকে। এটি সাংবাদিকদের জন্যও ভালো  একটি খবর বলে পরিগণিত।

ইসলামী আইনে কাফের নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রকে বলা হয় দারুল হরব। আলকোরআনের নীতি অনুযায়ী পরিচালিত রাষ্ট্রকে বলে দারুল ইসলাম। আর আর সবধর্মীয় বিশ্বাসীদের সমন্বয়ে চালিত রাষ্ট্রকে বলে দারুল আমান। 

এখন আপনারা বলুন বাংলাদেশটা  কোন সিষ্টেমের নীতিতে চালিত? দারুল হরব? না-কি দারুল ইসালাম? না দারুল আমান? এতো গেলো ইসলামী পরিভাষায় বর্ণিত রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বর্ননা।

এ কাঠামো কেন টেনে আনলাম তা-ই বলছি। যেহেতু বিষয়টি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত। আর সেটা ইসলাম ধর্মের এক উপাসনালয় তাই সমাজের কোনো অন্যায় নিয়ে কথা বলতে তার বৈধতার বিষয় জানতে হবে। ঘুষ-দূর্নীতি নিসন্দেহে অন্যায়, চুরি করা অন্যায়,জিনা করা অন্যায়,নেশা করা অন্যায় এমন আরো কতশতো অন্যায় আছে এই সমাজে চলমান।  এসব অন্যায়ের বিচার কী আল-কুরআানের আইন দিয়ে করা যাবে? না-কি  এই আইন বাস্তবায়ন করার কথা বলা যাবে? রাষ্ট্র চায় এসব অন্যায় না হোক। অন্যায় হলে তার বিচার কুরআনী আইন দিয়ে করতে চাইলে এটা কী তার অবৈধ ঘোষণা হবেনা? কারণ কলম দিয়ে ঘোষ খেলে,চুরি করলে কুরআনের আইন অনুযায়ী তাদের হাত কাটা যাবেনা। কারণ এতে রাষ্ট্রের নির্দেশ নেই। যা রাষ্টের নীতিরবিরোধী তা-ই যদি ইমাম সাহেব বলে থাকেন তাহলে সেটাও হতে পারে একটি রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। কারণ রাষ্ট্রটা তো দারুল ইসলাম হিসেবে পরিচালিত নয়।  যেখানে দারুল ইসলাম রাষ্ট্র নয়, সেখানে আল কুরআনের আইন দিয়ে ঘুষ-দূর্নীতির বিচার করা নেহায়েত অন্যায়। আমাদের বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ ও খৃষ্টানের বসবাস রয়েছে। তাই দারুল আমান রাষ্ট্র।  আবার এদেশ দারুল হরবও না। এদেশের বেশির ভাগ মুসলমান হলো নামের কারণে, বিশ্বাস ও আমলের কারণে নয়। সেই দিক থেকে কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতেও ঘুষ-দূর্নীতিবাজদের বিচার অনুমোদন দেয়নি। তাহলে ইমাম সাহেবে ঘুষ-দূর্নীতি নিয়ে বয়ান দিলেন কীসের ভিত্তিতে? রাষ্ট্রীয় আইনে, না-কি প্রচলিত সমাজের আইনে? 

আজকে খুঁজতে হবে  এসব  প্রশ্নের উত্তর।  রাষ্ট্র অনুমতি না দিলে যেমন ইসলামী আইন ঘোষনা করা যেমন জায়েজ নয়, তথাপি অনৈসলামি আচরণে গড়ে ওঠা  একটি সমাজের বিপরীতে দাড়িয়ে  আদর্শের কথা বলা,  কুরআনের আইনের কথা বলা সম্পূর্ণ নাজায়েজ।  আর এরকম নাজায়েজ হওয়ার কারণ  হলো আলেম ও ইসলামী বিশেষজ্ঞ গণ। কারণ তারা কেন ইসলামী পরিবেশ সৃষ্টি করে নাই বা কেন তাদের ইসলামী রীতি বাস্তবে প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করে নাই সেজন্য দায়ি  এসব ইমাম ওলামাগণ। 

ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের কাছে একবার শুনছিলাম, বাংলাদেশের মসজিদ সমূহে  ইমাম ওলামাদেরকে ধর্মীয় অনুশাসনের ব্যাপারে এই সমাজ যতটুকু বলার অধিকার দিবে ইমাম ওলেমাগণ ঠিক ততটুকুই বলতে পারবে ।! এখানে গত ১৬এপ্রিল রবিবার যে ঘটনাটি ঘটেছে ইমাম সাহেবের সাথে তার জন্য সিংহভাগ ইমামসাবই দায়ি। কারণ এসমাজের লোকজন তো ইমামকে রেখেছেন নামাজ-রোজা,তাসবিহ্-তাহলিল,দু”আ,মিলাদ, ফু-ঝাড়া ও দাওয়াত খাবার জন্য। সাথে মক্তবও চালানো কথা থাকতে পারে। তবে ওই ইমামকে এ সমাজ সিলেক্ট করেছে কুরআনের আইনের কথা বলার জন্য নয়। পরকালের বেহেস্তের লোভ দেখানো যাবে,নফল ইবাদতে সওয়াবের কথাও বলা যাবে বেশি করে। যারা অতীতে আল্লাহর ধ্যান খেয়ালে সংসার বিমুখ হয়ে নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছে তাদের কথায় বলা যাবে অবলীলায়।  কিন্তু বলা যাবেনা খুনের বলে খুন, হাতের বদলে হাত, দাঁতের বদলে দাঁত উপড়ে ফেলার কুরআনী আইনের কথা। ঘুষ-চুরিতে বলা যাবেনা হাত কাটার কথাও। কারণ এসব আইন আসছিলো বর্বরদের জন্য। আমরা তো সভ্য জাতি। আমাদের জন্য আইন রচনা করবে  রাষ্ট্রের আলোক উজ্জ্বল নেতৃবর্গরা। ইমাম ও আলেম এ যুগে মান্দাতার আমলের আইন নিয়ে ভাবা অচল। 

কানে আবার ভেসে আসছে  চাকুরী হারিয়ে তিনি লজ্জায় মরছেন। এলাকায় না-কি মুখ দেখাতে পারবেন না।  ছি! ছি! কী লজ্জা ?  কেহ বলছেন এই ইমাম সাহেব সত্য কথা বলে চাকুরী হারালেন।  তিনিই তো খাঁটি ইমাম। এ ইমামকে অনেকেই মর্দে মুজাহিদ গলায় ফুলের মালাও পড়াতে পারেন। কিন্তু কৌতুহল প্রিয় মানুষগণ জানতে চায় বীরেরা তো চাকুরী হারিয়ে কাঁদবার কথা নয়, সত্য কথা বলে চাকুরি হারিয়ে তিনি এখন কাঁদেন কেন? লজ্জান কেন? এটা  কী বীর পুরুষের কথা? না-কি কাপুরুষের কথা? কাপুরুষেরা  একবার মর্দে মুজাহিদ হয়ে পরক্ষণই লজ্জায় মরে নাকি? মনে হয়েছে নিজে সত্য কথা বলে  এখন অপরাধী হয়ে গেছেন।  ওই ইমামের কী কোনো এলেম আছে? যদি থেকে থাকে তাহলেতো জানা দরকার ছিলো তিনি  যাদের ইমামতের  দায়িত্ব পালন করবেন তাদের চিন্তা-ভাবনা,আচার-আচরণ,কৃষ্টি,বিশ্বাস ও আকিদা নিয়ে ভাবা। সেই ভাবনাটা যদি ভাবতে পারতেন তাহলে হেকমত অনুযায়ী  তাদের বিরুদ্ধে নয়, তাদের  আত্মগঠনমূলক  আলোচনায়  মনযোগ দিতেন। যে আলোচনায় তার চাকুরি চলে যাবার ভয় ছিলো তা থেকে বেঁচে থাকতে পারতেন।  এখন তিনি লজ্জায় কাঁদেন।  সত্যিকার অর্থে লজ্জা পাবার কথা  পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ম্যানেজারের। কারণ এ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ফেসবুক,অনলাইনে প্রচুর লেখা লেখি হচ্ছে। এসব তার কানেও ঢুকছে ও ঢুকানো হচ্ছে। তারপর এ ম্যানেজার দিব্যি প্রাণ খুলে হাসছে!  রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলমান কিছু না কিছু ধার্মিক হয়।  মন থাকে নরম। মুসুল্লীদের এই নরম দিল কী ইমামের প্রতি দয়াবান হলোনা?  তাৎক্ষণিক তো এর প্রতিবাদ হবার উচিত ছিলো। তা হয়নি কেন? নাকি এমন সমাজই এখানে তৈরি হয়েছে যে ধরণের সমাজ এই ম্যানেজারে চান।  একটি অন্যায় কর্ম করে যাবে কোনো কর্তা আর তা চেয়ে  চেয়ে দেখবে মসজিদ বেষ্টনীর এই সমাজ, এটা কী মানা যায়? মুসুল্লীরাও এর প্রতিবাদে ফেটে পড়া দরকার ছিলো। নাকি এই সমাজটাও ঘুষ আর দূর্নীতিতে আসক্ত হয়ে ম্যানেজারের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে? কথায় আছেনা, “সর্বাঙ্গে ব্যাথা, ঔষুধ দিব কোথা?  

সত্য কথা বলে মর্দে মুমিন বলে পরিচয় পাওয়া এই জেহাদী মানুষটাকেও নীতির মানুষ বলতে পারছিনা। তার উচিত ছিল ইমানকে আরো পাকাপোক্ত করতে  ম্যানেজারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার।  তা না করে লজ্জায় পড়ে “প্রতিবাদী” শব্দটাকে অপমান করলেন।  কিচ্ছু বলার নেই। যে যার মতো করে চলুক সেটাই ভালো।  কারণ স্বাধীনভাবে চলা আমাদের অধিকার।  নষ্টদের স্বাধীনতায় আমরা আজ পরাধীন। এ শৃখলে বাঁধা রবো কতদিন? অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি, আমরা যতদিন কিছু না বলবো ততদিনই মনে হয়   আমরা স্বর্গে আছি নাকি নরকে আছি তা ভাবাই অপরাধ !!  ( চলবে)

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category