জঙ্গিপনা এক আতঙ্কের বিষয়। এটি ধীরে ধীরে বাসা বাঁধে কিছু চিন্তক ও হতাশাবাদীর মনে ও মননে। জঙ্গি উৎপন্ন হওয়া এবং পাশাপাশি ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকর্ম চালিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। তার বিহঃপ্রকাশ হয় হঠাৎ। তার প্রতিরোধও হয় হঠাৎ। তবে একটি ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হবার পর সবাই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তার আগে নয়। দেশে এত এত গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে তারপরও তাদের সংগঠিত প্রস্তুতি সম্বন্ধে কিছুই জানতে পারেনা গোয়েন্দারা।
ঢাকা হলি আর্টিসেন ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় একই ব্যক্তিরা ছক আঁটে। তা গোয়েন্দারা জানতে পারে ঘটনা ঘটে যাবার পর। ছায়ানটে গ্রেনেড হামলা, ১৭ আগষ্টে একযোগে সিরিজ হামলায় জঙ্গিরা কাঁপিয়ে তুলে সারা দেশ। যতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ততটুকুই তো ফেরত আনা যাবেনা। এ ব্যার্থতা ও দায় গোয়েন্দারা কখনও নেয়নি ও নিবেনা। তারা বলছেন, গোয়েন্দাদের তথ্যপ্রদানের কারণে সারা দেশে এরচেয়ে বেশিকিছু করতে পারেনি জঙ্গিরা। গোয়েম্দা তৎপরতায় এরা সক্রিয় না থাকলে দেশে আরো ধ্বংসযজ্ঞ হতো বলে মত প্রকাশ করে। এতে গোয়েন্দা সংস্তার আত্মতৃপ্তি। কিশোরগঞ্জে জঙ্গি হামলার আগে নিশ্চয়ই ওরা রেকি করে যান স্থানটির আশপাশ। কয়েক মাস আগে থেকেই ওদের আনাগোনা ছিলো। ঘটনার ঘটার আগে একটি পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিলো যে শোলাকিয়ার আশপাশে সন্দেহজনক কতিপয় লোককে আনাগোনা করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ তাদের প্রতি সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। তবে কারো মুখ নিঃসৃত কথা হলো জঙ্গিরা বড় ধরনের ঘটনা ঘটানোর আগে টেষ্ট করতে ছোটো ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এমন একটি কোপাকুপির ঘটনা ঘটেছিলো শোলাকিয়ার অদূরে কাসোরারচর গ্রামে। ঈদ-উল-ফিতরের ৮/১০ দিন আগে ঘটে এ ঘটনা। সাংবাদিক আবুল কাশেম জঙ্গিদের নিয়ে রিপোর্ট করেছে তার পত্রিকায়। নিহত জঙ্গি আবীরের মতোই কজনকে সে গ্রামে আনাগোনা করতে দেখেছে কজন। হয়তো আবীর নাও হতে পারে আবার হতেও পারে। কিন্তু এটি মিডিয়ায় এসেছিলো যে কাসোরারচরে কাসেমের ওপ আক্রমণের ঘটনায় তার শত্রুদের সাথে জঙ্গিদের কোনো যোগসাদশ থাকতে পারে। তখনকার কাসারারচরের মসজিদের ইমামকে নিয়েও প্রশ্ন ওঠছিলো যা হয়তো সম্পূর্ণই সন্দেহমূলক। কিন্তু সাংবাদিক আবুল কাসেমের ওপর আক্রমণ হলে সেই সন্দেহ আরো ঘনিভুত হয়। সন্দেহের বিষয়টি ঠিক-বেঠিক যা-ই হতো এ ধারণা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্তা ইনভেস্টিগেশন করতে পারতো। কারণ আবুল কাসেম প্রায়ই জঙ্গি ঘটনায় তার পত্রিকায় ধারণামূলক রিপোর্ট করতো। সন্দেহমূলক ধারণায় রিপোর্টের পর যখন শোলাকিয়ায় এমন হামলা হয় তখন তখন আবীরের মতো দৃশ্যমান ব্যক্তির মানুষকে কাসোরারচর মসজিদের ইমামের সাথে দেখতে পাওয়ার কথাকে উড়িয়ে দেয়া যায়না। কাসেমের ওপর স্থানীয় শত্রুরা আক্রমণ করেছে ঠিক। তবে জঙ্গিরা হয়তো তাদের সাথে কোনো কানেকশন স্থাপন করতে পারে। কাসেমের ওপর আক্রমণকারীরা হয়তো জঙ্গি নয়, কিন্তু জঙ্গিরা যে শোলাকিয়ায় ঘটনা ঘটানোর আগে কয়েক মাস ধরে আশপাশ অঞ্চলে ঘুরাফিরা করছিলো ও রেকি করে পরিকল্পনা করছিলো তা অবিশ্বাস করি কেমনে? শোলাকিয়ায় ঘটনাই তো প্রমাণ হয়ে গেলো পূর্বেকার সন্দেহটি অমূলক ছিলোনা। এখন তা নিয়ে কী বলা যায়? গোয়েন্দা যারা আছেন তারা কী স্থানীয় পত্রিকা পড়েন নাকি পড়েন না তা বলা মুশকিল। এটা প্রকাশ হয়েছিলো স্থানীয় পত্রিকায়। কাসেম যেহেতু জঙ্গিবিরোধী ছিলো তাই জঙ্গিরা শোলাকিয়ায় বড় ঘটনার পূর্বে তার অদূরেই কাসেমের ওপর হামলা করে এমন ব্যক্তির ওপর ছোট ঘটনা ঘটিয়ে এলাকার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলো অনটেষ্টে জঙ্গিরা। জঙ্গিরা যখন বুঝলো এমন আক্রমনের প্রতিক্রিয়া জঙ্গিদের ওপর না গিয়ে তা স্থানীয় শত্রুদের ওপর চলে গেছে তখন জঙ্গিরা সেই বিষয়টাকে নিরাপদ মনে করেছে। তারপর এ এলাকার ইমাম সাহেব হাওয়া হয়ে গিয়েছিলো। অনুমান ও সন্দেহ অনেক সময় কাজে লাগে আবার ব্যর্থও হয়। তবে শোলাকিয়া জঙ্গি হামলার আগে কাসোরারচরের ঘটনায় মনযোগ দিলে ঈদের দিনে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারতো। এটা সার্বিক বিবেচনায় না আনলেও কাসোরারচরের ইমাম ও আবীরের মতো সাদৃশ্যপূর্ণ মানুষের আনাগোনা সন্দেহকে খেলো মনে করার বিষয় ছিলো না।
আজ ৮ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হচ্ছে নিহতদের স্মৃতিতে। কিন্তু এ থেকে আমরা কী শিক্ষা পেলাাম এটা কেউ বলছেনা। অবশ্যই এ থেকে যা শিক্ষণীয় সেটি হলো কোনো এলাকায় অপরিচিত মানুষ ঢুকলে বা কোনো হোটেলে অবস্থান করলে তার তদারকি দরকার। এখন পর্যন্ত প্রশ্ন জাগেনা যে শোলাকিয়ায় আক্রমণকারীরা কোথায় রাত্রিযাপন করছিলো? কোনো হোটেলে নিশ্চয়ই না। তারা একদম অবিশ্বাস্য জায়গায় অবস্থান নিয়েছিলো। হয়তোবা গ্রামের দুএকজন সরল মানুষের ওপর ওরা সওয়ার হয়েছিলো। এ থেকে আমাদেরকে সতর্ক থাকার শিক্ষা নেয়া দরকার। তাছাড়া জঙ্গিরা থেমে গেছে বললে ভুল হবে। যুগের পর যুগ পেরিয়ে হঠাৎ আবার গজিয়ে ওঠতে পারে। জঙ্গিরা নির্মূল হয়েছে বলে এতে আত্মতৃপ্তির কিছুই নেই। গোয়েন্দাদের তদারকি আরো সুক্ষ হোক, সুদূরপ্রসারী হোক। সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে তৎপরতা কাজে লাগুক আর নাই লাগুক অনুসন্ধান চালানো উচিত। আর তা না হলে সবই ব্যর্থ হবে। জঙ্গিরা আবার সক্রিয় হতে পারে জনগনের কোনো দাবি-দাওয়ার আন্দোলনের সাথে মিশে গিয়ে। তাই সতর্কতা ও অনুসন্ধান জরুরী।
Leave a Reply