রেজাউল হাবিব রেজা,/সম্পাদকীয়
“”””””””””””””””””””””””””””””””””””””শিল্ল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি, ক্রয়-বিক্রয়ের মাত্রা আশানুরুপ হওয়া ও এর প্রচার-প্রসার বহুলাংশে ছড়িয়ে যাওয়ায় প্রমাণিত হয় দেশটি অগ্রগতিতে দেদীপ্যমান । আমাদের দেশে বহুমাত্রিক শিল্পের একটি উল্লেখযোগ্য শিল্প হলো জুয়েলারি শিল্প। পর্যালোচনায় বুঝা যাবে ওই শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়?
বাংলাদেশে রয়েছে ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান। স্বর্ন ও রুপার কাঁচামালে পরিপূর্ণ থাকে জুয়েলারি ব্যবসায়। স্বর্ণ ও রুপা কখনও পঁচেনা। নিত্যদিন এর দাম বাড়ে বই কমেনা। তাই এ জুয়েলারি ব্যবসায় কোনো ক্ষতির কারণ থাকেনা। তবে তার আশানুরুপ ফল আসেনা নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে না পেরে। পোষাকশিল্প একদিন বাংলাদেশ সারাবিশ্বে ২য় স্থানে থাকবে কে জানতো?কিন্তু শ্রমিকদের নিষ্ঠা,শ্রম ও দক্ষতা আর প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের মার্কেটিং পলিসির কারণে আজ পোষাকশিল্পের বাণিজ্যিক সফলতা আকাশচুম্বি। সেটা হতে পারে জুয়েলারি শিল্পেও। আমাদের দেশে স্বর্ণশিল্পের দক্ষ কারিগর আছে যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত। কিন্তু বাংলাদেশে তাদেরকে কাজে লাগানোর মতো রপ্তানীমুখী কারখানার ঘাটতি থাকায় এসব কারিগর ধীরে ধীরে পাড়ি জমিয়েছে বিশ্বের নানা দেশে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস)এর প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বিগত ২৮ জুন(২০২২) ভারতের গোয়ায় বাংলাদেশি জুয়েলার্সদের সম্মানে আয়োজিত দু’দিনব্যাপি ” সোনার বাংলা” শীর্ষক জুয়েলার এক্সপোয়তে যোগ দিয়েছিলেন। সেই খানে তিনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বলেছিলেন, বাংলাদেশের আছে দক্ষ স্বর্ণশিল্পী কারিগর আর ভারতের রয়েছে দক্ষ ডিজাইনার। দুই দেশ এ দু’ সক্ষমতা নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে সারা বিশ্বে জুয়েলারি শিল্পে সবার ওপরে থাকবে । সন্দেহ নেই।
বাজুসের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর এবিষয়ে বলেন, আমি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি সরেজমিন দেখেছি, অনেক দক্ষ কারিগরের সাথে কথা বলেছি। বাংলাদেশো কাজের ভালো সুযোগ না পেয়ে অন্য দেশে গিয়ে অনেকে সেখানে কাজ করে বিশ্বমানের অলংকার তৈরি করছেন। ” বাজুসের প্রেসিডেন্টের এ কথাটি মাথায় রেখে সঠিক কর্মপন্থা গ্রহণ করলে বিদেশে থাকা ওইসব কারিগর দেশে ফিরে আসবে এবং জুয়েলারি শিল্পে এক যুগান্তরী বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে বলে মনে করি। আমাদের বাংলাদেশি জুয়েলারি দ্রব্যের কদর থাকায় ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে বাজার সৃষ্টিতে অনন্য ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবো।
✍️স্বর্ণ নীতিমালার বাস্তবায়নঃ স্বর্ণ নীতিমালা বাস্তবায়নকল্পে গঠিত হয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন। যাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৪০হাজার পরিবারের দেশের সর্ববৃহত বাণিজ্য সংগঠনে উন্নীত হয়েছে। বাজুসের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং দেশিয় স্বর্ণশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করা। এ সংগঠন বিশ্ববাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বর্ণের মান ও দাম নির্ধারণ করে যাচ্ছে। জুয়েলারি শিল্পের ঐতিহ্য,ব্যবসায়িক সুনাম ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সার্বিক দিক বিবেচনা করে অলংকার ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নির্দেশিকা-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। তৎসঙ্গে আছে দেশ ও রাষ্ট্রের সাথে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ঐকান্তিক পর্যবেক্ষণ। সুচারুরুপে সংগঠন,দেশ ও আন্তর্জাতিক নীতি নৈতিকতা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ হবে স্বর্ণশিল্পের এক স্বর্গ রাজ্য।
✍️অলংকারের মান ও ডিজাইনঃ
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে সোনার ৪টি মান রয়েছে। যথাক্রমে ১৮,২১,২২ ও ২৪ (৯৯দশমিক ৫) ক্যারেট। এই মানের বাহিরে কোনো সোনা বা সোনার অলংকার বিক্রয় করা যাবেনা। অপরদিকে বাজারের চাহিদা পূরণ করতে ভারতীয় ডিজাইনারদের সহযোগিতা নেয়া যায়। কারণ ভারতের অলংকার ডিজাইন সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত। আমরা তাদের সহযোগিতা নিতে পারি।,
✍️রপ্তানি সম্ভাবনা ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতাঃ বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের স্বর্ণালংকার তৈরি হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ বিশ্বমানের স্বর্ণালংকার রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে। ইতিমধ্যে বিশ্বখ্যাত জুয়েলারি ব্রান্ড “মালাবার” বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থাপনের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। তাই বর্তমানে বাংলাদেশের ভিশন হচ্ছে ম্যানুফ্যাকচারিং। বাংলাদেশ এখন জিডিপিতে জুয়েলারি খাত অবদান রাখছে।
মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি জুয়েলারি পণ্য যাতে ইমিটেশান গহনার সাথে প্রতিযোগিতা করে ভালোভাবে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য তারণ্যের মেধা, উদ্যোগ ও নেতৃত্বের প্রয়োজন। তাছাড়া বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী সবরকম ক্রেতার জন্য জুয়েলারি পণ্য তৈরি বিপণন বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়নধর্মী একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।
✍️চোরাচালান প্রতিরোধঃ দেশে অবৈধভাবে আসা সোনার সিকিভাগও মনে হয় আইনপ্রয়েগকারী সংস্থাসমূহের নজরে আসছেনা। বাঁধাহীন অবস্থায় দেশে আসছে চোরাচালানের বিপুল পরিমাণ সোনার চালান। যেভাবে আসছে ঠিক একইভাবে পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।চোরাচালান প্রতিরোধে চোরাচালানের সম্ভাব্য রুটে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চৌকি বসানোর দরকার এবং চোরাচালান ধরতে যারা সক্ষম হন তাদেরকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করলে প্রশাসনিক সদস্যগণ জীবনের ঝুঁকি নিতে কুন্ঠাবোধ করবেনা। এ বিষয়ে চোরাচালানের সম্ভাব্য স্থানে জনগনের উপস্থিতিতে কাউন্সিলিং করা দরকার। কোনো চোরাচালানের মামলা থাকলে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে চোরাচালান বহুলাংশে কমে যেতে পারে। বাজুস তার সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় প্রশাসনের সাথে যৌথভাবে চোরাচালান প্রতিরোধে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পারে।
(সংক্ষিপ্ত)
Leave a Reply