আজ ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গান শোনাতে আর আসবে না খালিদ।

প্রত্যেক মানুষের এক পরিণতি আছে। সদ্য পরিণতির তারকার নাম খালিদ। খালিদ গান গাইতো সরল ভাবে। জীবনের সরলতার আদলে। সবসময় প্রাণবন্ত থাকতো, হেসে বেড়াতো, আবার প্রাণহীনতার আরেকটা দিক দেখেছি তার মাঝে যার কারণে স্যাড রোমান্টিক গানগুলো শ্রোতার হৃদয়ে সাড়া জাগাতো।

প্রতিটা সুপার হিট গানের মাঝেই সুখের অনুভূতি থাকে। খালিদের সুপারহিট গানের সংখ্যা অনেক, তার প্রায় সব কটা গানই সুপারহিট। এটা একজন শিল্পীর জন্য পরম প্রাপ্তি। আশির দশকেই শ্রোতার হৃদয়ে সে জায়গায় করে নিয়েছিলো। আজ এতো বছর পরেও শ্রোতার কাছে তার গানের আবেদন বদলায়নি। এখানেই একজন শিল্পীর জীবনের সার্থকতা, ভালো গানগুলো স্বমহিমায় বেঁচে থাকে।

আমার আর খালিদের বেশ কয়েকটা ডুয়েট গান হয়েছে ‘নিছক স্বপ্ন’ অ্যালবামে । আমাদের “ঘুমাও” গানটা তো অনেক শ্রোতার প্রিয় একটি গান। খালিদ বলতো “নুমা” তুমি কিন্তু বেশি ভালো গেয়েছো! এখন সে স্মৃতি মনে পড়ে কষ্ট পাচ্ছি।

আমরা একসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে পড়াশোনা করেছি। খালিদ আমার সহপাঠি, সহশিল্পী এবং বন্ধু। আমি ওর মধ্যে কোন অহংকার দেখিনি কোনদিন। এই তো সেদিনই কথা হলো তার সাথে, আরো ডুয়েট গান করতে চাইলো, বল্লাম করবো। আমেরিকায় প্রোগামে ওর ছেলের গান শুনেছি জেনে খুশি হলো। আবার আমাদের দেখা হবে সে কথাও হলো। কিন্তু দেখা হলো না। ওর অকালে চলে যাওয়া খুব কঠিন করে দিলো আমাদের সবাইকে বিশেষ করে শিল্পীদের।
জীবনের প্রতি উদাসীনতা কেউ রাখবেন না ছোট বড় সব শিল্পীকে বলছি। নিজেকে ভালোবাসুন। আমাদের আত্মসচেতন হতে হবে। পরস্পরের প্রতি সহানুভূতির পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে।
এটা সত্য যে সংগীতের অঙ্গন এখন আর আগের মতো নেই। সহজাত প্রেরণায় এগিয়ে আসা স্বভাব শিল্পীর জীবন এখন কন্টকাকীর্ণ, এখন গান আর আগের মতো হয় না! তাই গানের পাশাপাশি নিজের জীবন নিয়ে ভাবুন। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভাবুন। যতটুকু কাজ হয়েছে যথেষ্ট, তা নিয়ে সন্তুষ্ঠ থাকুন, কাজ করুন, হতাশাগ্রস্থ হবেন না। গানের জন্য ভালোবাসা, ভাবনা, সুর, কথার গভীরতা লাগে যা এখন হয়ে উঠে না। এখন কর্পোরেট কালচার! এখানে গান হয় না, হয় এ্যাড মার্কেটিং! সেটাকে গান বলা যায় না!

সাদী ভাই চলে যাওয়া আর খালিদের মৃত্যু আমাদের আরো বুঝিয়ে দিয়েছে যে, শ্রোতা শিল্পীকে যে আসনে বসায় ,তার জন্য বহুদিন কাজ করতে হয় না, একটা ভালো গানই হয়তো যথেষ্ট তাকে মনে রাখার জন্য, শিল্পীকে ভালোবাসার জন্য। খালিদ এর উদাহরণ। সে খুব বেশি গান করেনি। প্রকৃত শিল্পীস্বত্বা নিয়ে আন্তরিকভাবে সাধনা করলেই তা সম্ভব।

শিল্পীদের ভালো থাকতে হবে তার নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য। শিল্পীর ক্ষতি হলে সমাজ ব্যথিত হয়, পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই আমাকে আমারই দেখতে হবে। অভিমান অভিযোগ কোন কাজে আসে না। মনে রাখতে হবে। আমাদের কষ্ট আছে কিন্তু পাশাপাশি অনুসরণীয় হয়ে বাঁচতে হবে। কেননা আমাদেরকে দেখে মানুষ অনেক কিছু শেখে। তাই শিল্পীকে সুস্থ্য, সাহসী ও কল্যাণকর হয়ে চলতে হবে।
মনে রাখতে হবে, কোন প্রকার নেতিবাচক বার্তা যেন তৈরি না হয়। একই সাথে বলছি সমাজের অন্যন্য পেশার মানুষও যেনো সরলতার আদলে শিল্পীস্বত্বা নিয়ে বেঁচে থাকা এসব মানুষগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হন। কেননা শিল্পীরা কাজ করে মানুষের জন্য।

খালিদের বউ শামিমা আর তাদের একমাত্র সন্তানের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। ওর আত্মার শান্তি কামনা করছি, মহান আল্লাহতালা তাকে জান্নাত দান করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category