আজ ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয় রাষ্ট্রকাঠামোর ৭সংকটের সংস্কার ও মৌলিক অধিকারের বিষয়ে সংস্কার লাগবে- হাসনাত কাইয়ুম

  1. ভোরের আলো বিডি ডেস্কঃ

  2. আমরা চাই সংস্কার, সমঝোতা এবং সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন, বলছিলেন রাষ্ট্র  সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম। যদি সমঝোতা না হয়, তবে বাংলাদেশের সামনে বিপদ আছে। আমরা এজন্য বলছি, সংস্কারের জন্য সমঝোতা করেন। সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করেন।   শনিবার বিকাল ৩টায় কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আয়োজিত মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন তিনি।

তিনি  আরো বলেন, সংস্কারের জন্য আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির সঙ্গে কাজ করেছি। আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। আমরা কেবলমাত্র সংস্কারের জন্য বিভিন্ন জনের সঙ্গে ঐক্য করেছি। সংস্কারের জন্য প্রয়োজনে যার তার সঙ্গে ঐক্য করতে রাজি আছি।

তবে জামায়াতে ইসলামি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে

“”””””””””””””””””””””””””‘””””””””””””

ঐক্য নয়। কারণ এরা গণহত্যাকারী।  

“”””””””””””””””‘”””””‘”‘””””””””

তিনি  বলেন, আমাদের ঘোষিত দুটো শত্রু রয়েছে। একটা গণহত্যাকারী এবং অপরটি পাচারকারী। এরা যতক্ষণ পর্যন্ত গণহত্যা এবং এটার জন্য বিচারের মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে ঘোষণা না দিয়ে সরে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হতে পারেনা।বাংলাদেশের অজস্র সংস্কারের মধ্যে প্রধানতঃ সাতটি সংস্কারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধান, বিচার বিভাগ, সংসদ, প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, অর্থনৈতিক খাত ও মৌলিক অধিকারের যে ধারণা রয়েছে তার সংস্কার লাগবে। এই সাতটি জায়গায় যদি কিছু সংস্কার করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ অর্থাৎ যে বাংলাদেশ বানানোর জন্য যুদ্ধ হয়েছিল, যে বাংলাদেশ বানানোর জন্য বার বার আন্দোলন হয়েছে, সেই পথেই বাংলাদেশ হাটতে শুরু করবে বলে তিনি ধারণা  করেন। 

তিনি বলেন, এই সংস্কারগুলো হলে কালকেই বাংলাদেশ সোনার বাংলা হয়ে যাবে, এমনটা ঘটবেনা। তবে বাংলাদেশ যে উল্টো পথে হাটা শুরু করেছে, যে কারণে স্বাধীন করা হয়েছে এ দেশ, সেই লক্ষ্যের দিকে না গিয়ে ক্রমাগত যে পেছন দিকে যাচ্ছে, সেই পথটা থেকে বাংলাদেশ ফিরে আসা শুরু করবে এবং মানুষের বাংলাদেশ হয়ে উঠতে শুরু করবে।

হাসনাত কাইয়ূম বলেন, সংস্কারের জন্য আমরা দুটো পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য বলেছিলাম। এরমধ্যে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া এবং রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করা। তাদের মতামতের মধ্যে কিছু কমন মতামত বের হয়ে আসবে। এই কমন মিনিমাম মতামত নিয়েই সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐকমত্য হবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবের বাইরে তারা তাদের মতো করে বোঝার সময় নিয়েছে, সময়ক্ষেপণ করছে, সময়ক্ষেপণ করে তারা যে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে, সেই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছে। এখনো পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের বাইরে যারা রয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হচ্ছেনা। সেজন্য প্রক্রিয়াটা দীর্ঘতর হচ্ছে। যত সময় যাচ্ছে, তত অর্থাৎ যারা নির্বাচনের ভেতর দিয়ে ক্ষমতায় আসবে বলে আশা করে, তারা মনে করছে তাদেরকে ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করা হচ্ছে। এই জায়গাগুলোর মধ্যে সমঝোতা হওয়া দরকার ।

তিনি আরো বলেন, কেউ কেউ মনে করছেন তারা নিজেরা যত পরিবর্তন চান, সব পরিবর্তন করতে হবে। আবার কেউ মনে করছেন তারা যে পরিবর্তন চান, এর বেশি পরিবর্তন হবেনা। এ অবস্থায় বাংলাদেশ একটা টালমাটাল পরিস্থিতি ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে বলে মনে করেন এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ হাসনাত কাইয়ুম।

বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, আঞ্চলিক যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মায়ানমার থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে সমস্ত জায়গা ভারত এমনকি সমগ্র বিশ্ব পরিস্থিতি আজ রাজনৈতিকভাবে অস্থির এবং অস্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। আমাদের দেশ এ রকম একটা অস্থির অবস্থার মধ্যে যদি পক্ষে বিপক্ষে এ রকম হয়, ঝঞ্ঝাসংকুল নৌকার মধ্যে প্রধান দুটো পক্ষ যদি লড়াই করে, তাহলে এ নৌকা ডুববে।আজকে যেটা সন্দেহ হচ্ছে, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংস্কারের কথা বলে, কিংবা যে সন্দেহ হচ্ছে সংস্কার না করে ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার করবেনা, এই যে সন্দেহ, এই যে অবিশ্বাস সেটা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন, এখনো রক্তের দাগ শুকায়নি। এখনো আহত ছেলেরা মারা যাচ্ছে। এখনো আহত ছেলেরা হাসপাতাল ছাড়েনি। এই অবস্থার মধ্যে যেভাবে বিভাজিত হচ্ছে দেশ, এ রকম বিভাজন হলে এ দেশের মানুষের মতো দুর্ভাগা আর কেউ হবেনা। কিশোরগঞ্জ জেলা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সোহেল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক বিমল চন্দ্র সরকার, অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন, কিশোরগঞ্জ জেলা উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভানেত্রী ফাতেমা জোহরা, এডভোকেট শামসুল আলম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য হরিপদ দাস নান্টু, সেলিম পারভেজ, নিকলী উপজেলা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক খায়রুল মোমেন স্বপন প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন কিশোরগঞ্জ জেলা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম জুয়েল।

সর্বোপরি  চলমান দ্বান্দ্বিক  উপশমে পারষ্পারিক ভাবনার ঐক্য তথা সমঝোতার অবগাহনে সিক্ত হয়ে একটি সেতুবন্ধন রচনা করতে হবে এবং ঐক্যমতের নির্বাচন অভিযাত্রায় অগ্রসর হওয়া জরুরী বলে বিভিন্ন মত প্রতিফলিত হয় এ মতামত অনুষ্ঠানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category